রোজদিন ডেস্ক :- বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির আবহেই বাংলায় হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা। দেশ বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন এই মেলায়। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে কোনও অস্থিরতা তৈরি না-হয়, তার জন্য বিশেষ নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো পুণ্যস্নান ও মেলার আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন ৃুখ্যমন্ত্রী।
গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হতে হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার আগেই মঙ্গলবার নবান্নে রাজ্যের মোট ১৭টি দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বছর গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হবে ৮ জানুয়ারি থেকে। চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর ১৪-১৫ জানুয়ারি এই দুইদিন সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান হবে। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবার ২ হাজার ২৫০টি সরকারি বাস, ২৫০টি বেসরকারি বাস, ৯টি বার্জ, ৩২টি ভেসেল, ১০০টি লঞ্চ এবং ২১টি জেটি ব্যবহার করা হবে। তিনি এও জানান, সব যানের জিপিএস ট্র্যাকিং সুবিধা থাকবে। একই সঙ্গে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে যা করা হবে ইসরোর সাহায্যে। যাতে ইন্টারনেট না থাকলেও সমস্যা না হয়। আর গঙ্গাসাগরের মেগা কন্ট্রোল রুম থেকে সবকিছু মনিটর করা হবে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে সঠিকভাবে ট্র্যাফিক ব্যবস্থার জন্য ১৬টি বাফার জোন করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে গাড়িগুলি স্পিড ক্যালিব্রেটর বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্যবারের মতো সাগরে বাসগুলিতে ‘সাগর বন্ধু’ থাকবে। মেলা এলাকায় ১ হাজার ১৫০টি সিসিটিভিও বসানো হচ্ছে।
এদিন নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কিছুটা বিপজ্জনক এলাকা রয়েছে। নীরবে নজরদারি চালাতে হবে। ওপারে তো আমরা যেতে পারব না। তবে, সতর্ক থাকতে হবে। যাতে অবাঞ্ছিত ঘটনা না-ঘটে, তা দেখতে হবে। তাই ওয়াচ টাওয়ার বাড়াতে হবে।” এই নজরদারির জন্য ওয়াচ টাওয়ারের পাশাপাশি, ড্রোনের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন তিনি।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং ভারতীয় নৌসেনা-কেও সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছেন মমতা। সেই মতো নৌসেনার তরফে জানানো হয়েছে, মেলা চলাকালীন দু’টি হোভারক্রাফ্ট এবং তাদের একটি জাহাজের মাধ্যমে নজরদারি চলবে ভারত-বাংলাদেশ জলসীমায়। তবে, মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, সম্ভব হলে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হোক। যদিও, নৌসেনা জানিয়েছে তাদের কাছে এ-ধরনের কোনও ড্রোন নেই।
তবে, প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের ড্রোন সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ভারতীয় মৎস্যজীবীরা জলসীমা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। বেশ কিছুদিন ধরে এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল।
মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গাসাগর নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকের মাঝেই, ওই মৎস্যজীবীদের ছাড়া পাওয়ার একটা সম্ভাবনা যে তৈরি হয়েছে বলে জানান। গোটা বিষয়টি দেখার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে নির্দেশও দেন। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রমের ঘটনায় এক মৎস্যজীবীর প্রাণ গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বৈঠক থেকেই তাঁর পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন।
Be the first to comment