করোনা কেড়ে নিল‌ প্রাণ, প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

Spread the love

বাংলা সংবাদমাধ্যম জগতে শোকের ছায়া। প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, জি ২৪ ঘণ্টার এডিটর অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই বাইপাসের পাশের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে হেরে গেলেন এই দাপুটে সাংবাদিক। রবিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী অদিতি ও এক মেয়ে তিতলি বর্তমান।

বিশিষ্ট সাংবাদিকের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, বাংলার সনামধন্য টেলিভিশন অ্যাঙ্করদের মধ্যে অন্যতম অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি একজন প্রতিভাবান ও গতিশীল সাংবাদিক ছিলেন। সাংবাদিক হিসাবে সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন যারা কভার করেছিলেন তাঁদের মধ্যে আমরা অনেককেই হারিয়েছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও লেখেন, ওঁর পরিবার, পরিজনদের সমবেদনা জানানোর মতো ভাষা আমার জানা নেই। ওঁর মা, স্ত্রী অদিতি, কন্যা তিতলি, দাদা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (রাজ্যের মুখ্যসচিব)।

বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক-পর্বে জেলায় জেলায় সফর শুরু হয় অঞ্জনের। নেব নেব করেও কোভিড টিকা নেওয়ার সময় করে উঠতে পারেননি। গত ১৪ এপ্রিল তাঁর করোনা ধরা পড়ে। সেরে উঠে কিছুদিন ওই হাসপাতালেরই স্যাটেলাইট সেন্টারে বিশ্রামে ছিলেন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে ছিলেন। কিন্তু তারপর ফের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফুসফুস কার্যত বিকল হয়ে পড়ে। প্রথমে তাকে ভেন্টিলেশনে তারপরে একমো ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। তারপরেই আজ সব শেষ।

৩৩ বছরের দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে বাংলা সংবাদমাধ্যমের রূপ বদলের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমানের কয়লা খনি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা অঞ্জনের স্কুলজীবন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। এই কৃতী ছাত্রের পরের গন্তব্য প্রেসিডেন্সি কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার স্বর্ণপদক জয়ী অঞ্জন তরুণ বয়সেই চাকরিতে ঢোকেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। কলকাতা ছাড়াও অঞ্জন আনন্দবাজারের পটনা, ত্রিপুরা এবং দিল্লি ব্যুরোতে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন।

সংবাদ দুনিয়ায় জি মিডিয়া যখন বাংলা চ্যানেল ২৪ ঘণ্টা লঞ্চ করেন তখন তাঁর প্রথম সারির কর্মীদের মধ্যে ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিনেই সেই চ্যানেলের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। যদিও মাঝের কয়েক বছরে এবিপি ডিজিটাল থেকে TV9-বাংলারও প্রথম এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কেরিয়ারের শুরুর দিকে আনন্দ বাজার পত্রিকা, আকাশ বাংলা, আজকাল, ইটিভি-তেও সাংবাদিকতা করেছেন তিনি।

রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেজ ভাই ছিলেন তিনি। তাঁর এই অকাল প্রয়াণে সাংবাদিকতার জগতে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হল বাংলা সংবাদমাধ্যমে। একদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মেজো দাদাকে হারালেন করোনায় আর তারপরের দিনই মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় হারালেন তাঁর ভাইকে। এখানেও সেই করোনাই কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে রোজদিন.ইন-এর পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারবর্গকে জানাই সমবেদনা। ওঁনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*