কী সাহস! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও প্রার্থীর ‘প’ নিয়ে কথা বলছেন না। আর সেখানে কিনা তৃণমূলের এক সাংসদ উনিশের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবেন তাঁর নাম ঘোষণা করে ভোট চেয়ে ফেললেন! ফের অস্বস্তিতে বীরভূম জেলার তৃণমূল। সৌজন্যে সেই বোলপুরের সাংসদ অধ্যাপক অনুপম হাজরা।
সোমবার বিকেল পাঁচটা তিন মিনিটে নিজের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইট করেন তরুণ এই সাংসদ। সেখানে তিনি লেখেন, “আসন্ন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে শ্রী অসিত মাল মহাশয়কে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন!!!”
প্রসঙ্গত, অনুপম এখন বোলপুরের তৃণমূলের সাংসদ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। এমনকী গত বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রচারেই ডাকেনি তৃণমূল। আর অনুপমও সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক তির্যক মন্তব্য করে গিয়েছেন দলের বিরুদ্ধে। একবার তো বিশ্বভারতীর ভিতরে মারামারিতেই জড়িয়ে পড়েছিলেন সুঠাম দেহের এই সাংসদ। ধমক খেয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তারপর মাঝে কিছুটা সময় চুপচাপ থাকলেও এ দিন আরও একবার বোঝা গেল, অনুপম আছেন অনুপমেই।
তৃণমূল সূত্রের মতে, একপ্রকার নিশ্চিত অনুপমকে আর উনিশের ভোটে প্রার্থী করবেন না দিদি। কিন্তু দলনেত্রীর উপরে গিয়ে এমন টুইট কেন? দ্য ওয়াল-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরার সঙ্গে। তিনি বলেন, “সময় এলে মিলিয়ে নেবেন আমি যাঁর নাম লিখেছি তাঁকে প্রার্থী করা হয় নাকি!” বোলপুরের সাংসদকে প্রশ্ন করা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো এখনও এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। তাহলে আপনি দিদির আগে গিয়ে … কথা শেষ হওয়ার আগেই অনুপমের উত্তর, “আমি তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সৈনিক। তাই কিছুটা আগে থেকেই ভোট প্রচার শুরু করে দিলাম।”
অনুপম উনিশের ভোটে বোলপুরে যে প্রার্থীর নাম লিখে ভোট চেয়েছেন, সেই অসিত মাল ছিলেন আগে কংগ্রেসের বিধায়ক। ষোলর ভোটের আগে দলবদল করে আসেন তৃণমূলে। তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁর পুরনো কেন্দ্র হাসনে। কিন্তু গত ভোটে ওই কেন্দ্রে অসিতবাবু তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের রসিদ মিল্টনের কাছে। এ দিন তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে অনুপম ঘোষণা করে দেওয়ার পর দ্য ওয়াল-এর তরফে যোগাযোগ করা হয় অসিতবাবুর সঙ্গেই। বস্তুত তখনই তিনি জানতে পারেন অনুপম হাজরা এই কাণ্ড করেছেন। তাঁর কথায়, “এগুলো বাচ্চা ছেলের মতো কাঁচা কাজ। একজন সাংসদের থেকে এই ধরনের আচরণ মানুষ আশা করেন না। কে প্রার্থী হবে, কোথায় প্রার্থী হবে, তা ঠিক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উনি কেউ নন।”
এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হয়েছিল তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু কেষ্ট বাবু ফোন তোলেননি। পরে তাঁর প্রতিক্রিয়া পেলে আপডেট করে দেওয়া হবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অনুপম জেনেই গিয়েছেন আর তাঁর দিল্লি যাওয়া হবে না। তাই যাওয়ার আগে যতটা বিপাকে ফেলা যায় দলকে সেটাই করছেন
Be the first to comment