রাজ্যপালকে সরিয়ে উচ্চ শিক্ষাদপ্তরের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনতে চেয়ে বিল পাশ হল বিধানসভায়। যদিও বিল পাশের প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ইস্যুতেও তারা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এদিকে এবার এই বিল পাঠানো হবে রাজ্যপালের কাছে। তিনি অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনা সংক্রান্ত এই বিলে স্বাক্ষর করবেন না। ফলে বিলের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। রাজ্য সরকারের অভিযোগ, রাজ্যপালের কাছে বিল পাঠানো হলে তা তিনি স্বাক্ষর করেন না। ফলে প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হয়। এবার রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।
এদিন উচ্চ শিক্ষাদপ্তরের অধীনস্থ কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বদলের বিল আনা হয় বিধানসভায়। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৭ এপ্রিল কেন্দ্রের তৈরি করা পুঞ্চিত কমিশন সুপারিশ করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালের বদলে রাজ্য নিজেদের পছন্দমতো একজনকে বসাতে পারেন। সেই সুপারিশকে মানদণ্ড হিসেবে ধরেই আনা হয়েছে এই বিল।
সোমবার বিধানসভায় বিলটি পেশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, এটা ঐতিহাসিক বিল। বিলের স্বপক্ষে মতপ্রকাশ করেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে বিল পেশ করা মাত্র বিরোধিতায় সরব হন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, বিশ্বনাথ কারকরা। তাঁদের কথায়, এই বিল আনার অর্থ শিক্ষাক্ষেত্রেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতেই এই বিল আনছে রাজ্যের শাসকদল।
পালটা দেয় তৃণমূলও। বিলের স্বপক্ষে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত ১১ বছর ধরে এই বিল আনার প্রয়োজন পড়েনি। এবার আনতে বাধ্য হলাম। কারণ, বিল পাঠালেই তা আটকে দেন রাজ্যপাল। প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হয়। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ২০১৩ সালের নরেন্দ্র মোদির গুজরাটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। কারণ, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদি সে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ব্রাত্য বসুর আরও প্রশ্ন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তো প্রধানমন্ত্রী, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হয় না? শেষপর্যন্ত বিলের ১৮২ ভোট পড়ে বিলের পক্ষে এবং বিলটি পাশও হয়ে যায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিলের বিপক্ষে পড়ে ৪০টি ভোট। অথচ বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন ৫৭ জন বিজেপি বিধায়ক।
এ নিয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, আমাদের ৫৭ জন বিধায়ক ছিলেন। ৪০টা ভোট কীভাবে পড়ে? জালিয়াতি হয়েছে। আমরা আদালতে যাব। তাঁকে কটাক্ষ করে শিক্ষামন্ত্রীর জবাব, কারা রহস্যময় সেটা খুঁজে দেখুন। আমরা কীভাবে জানব?”
এদিকে নিয়ম মেনে বিল পাঠানো হবে রাজ্যপালের কাছে। কিন্তু তিনি যে সেখানে স্বাক্ষর করবেন না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে বিল ফের বিধানসভায় ফেরত আসতে পারে। তার পর তা আরও একবার রাজ্যপালের কাছেই যাবে। যেহেতু শিক্ষা সংবিধানের যুগ্মতালিকায় রয়েছে, তাই বিলটি কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন তিনি। তাই বিধানসভায় বিল পাশ হলেও এখনই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Be the first to comment