আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে অভিষেকের দক্ষ নেতৃত্বে

Spread the love

তৃণমূল কংগ্রেসের পাখির চোখ এবার ত্রিপুরা। পার্শ্ববর্তী রাজ্যের ভোটকে কেন্দ্র করে সংগঠনকে গুছিয়ে নিতে মরিয়া তৃণমূল। পাশাপাশি অসমেও নিজেদের ঘর গোছানোর কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে জোড়া ফুল শিবির।
পশ্চিমবঙ্গের ভোট মিটতেই আসন্ন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস সহ বিভিন্ন অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের সাথে জোট নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোট সামনেই। এই নির্বাচন বিজেপি বা কংগ্রেসের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের কাছেও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় রাজনীতিতে আজ দাড়িয়ে রয়েছে এক মহা সন্ধিক্ষণে৷
দেশজুড়ে বিজেপি তথা মোদি-শাহ বিরোধী হাওয়ার গতিবেগ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বঙ্গ-ভোটে বিজেপিকে একক লড়াইয়ে পর্যদুস্ত করে সর্ভারতীয়স্তরে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরার আওয়াজও জোরদার হচ্ছে। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের বিকল্প হিসাবে তৃণমূলের উঠে আসার জমি প্রায় তৈরি হয়ে আছে৷ সেকথা মাথায় রেখে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে জাতীয়স্তরে আরও শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক রদবদল করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতা বৃদ্ধি করার গুরুদায়িত্ব বর্তেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযের উপর়৷
রাজ্যে নির্বাচন শেষের সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে নতুন করে ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সাধারণত এমন চিত্র সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। অপর দিকে অনেক হাঁকডাক করেও লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হওয়া দল নিজের ঘর ধরে রাখা তো দূরস্থ, নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য একে ওপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের পালাও শেষ করে উঠতে পারেনি।
রাজনীতিতে দেখা যায় ভোটে জেতার আনন্দে সংগঠনের কথা সাময়িকভাবে বিস্মৃতই হয় জয়ী দল৷ আর পরাজিত দল নেমে পড়ে সংগঠনকে মজবুত করার কাজে৷ এমনই দেখা গিয়েছে অতীতেও৷ কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে এবার উল্টো ছবি।
তৃণমূল কংগ্রেস এরই মধ্যে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে নেমে পড়েছে ময়দানে। সামাজিক মাধ্যমে অতি সক্রিয় বঙ্গ-বিজেপি এই বিষয়টিও হালকাভাবে নিয়েছে৷
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচন। তাঁকে এই আসনে বসিয়ে জাতীয়স্তরে তৃণমূলের প্রাসঙ্গিকতাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বিজেপি-র পালে হাওয়া দিনে দিনে কমে চলেছে। দেশজুড়ে দানা বাঁধছে গেরুয়া বিরোধী হাওয়া। বাংলার ভোটে একা লড়াই করে মোদী-শাহকে পরাজিত করে সর্ভারতীয় রাজনীতিতে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী জাতীয়স্তরে বিজেপিকে কোনঠাসা করার জন্য এরই মধ্যে আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, পেট্রোল-ডিজেল, রান্নার গ্যাস-সহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে বিজেপি বিরোধী হাওয়া সারা দেশে বইছে। এই হাওয়ার গতিমুখকে এক জায়গায় এনে লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরকে ধাক্কা দেওয়ার মতন পরিস্থিতি তৈরি হতে শুরু করে দিয়েছে৷
জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের জায়গাকে আরও মজবুত করার এটাই সময়। আর তা বুঝতে তৃণমূল কংগ্রেস দেরি করেনি। অতীতে দু-একবার চেষ্টা হলেও তা তেমন দানা বাঁধেনি। এবার তাই তৃণমূল সুপ্রিমো সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ছড়িয়ে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই তুলে দিয়েছে দলের কর্মসমিতি বৈঠকে ।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের মধ্যেও নানা সময়ে তাঁর হস্তক্ষেপে অনেক রাজনৈতিক জটিলতা দূর হয়েছে৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, সর্বভারতীয় স্তরে অভিষেকের এই উত্থানের পিছনে মোদী এবং অমিত শাহের ভূমিকাও বড় কম নয়৷ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারে গেরুয়া বাহিনী প্রতি মুহুর্তে অভিষেককে টার্গেট করেছিলেন৷ তাঁদের এই প্রচেষ্টা যে একেবারে বিফলে গেছে তা ভোটের ফলাফলই প্রমাণ করে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে করা অজস্র অভিযোগ ব্যুমেরাং হয়ে ফিরেছে গেরুয়া শিবিরে৷ মোদী-শাহের এই অপরিনামদর্শী কাজের জন্য গোটা দেশে বিজেপি-বিরোধী অন্যতম ‘প্রধান মুখ’ হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গোটা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন, অভিষেকও বিজেপি’র টার্গেটে রয়েছে। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা প্রমাণ করতেও ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া বাহিনী।
জাতীয়স্তরে দলের সংগঠন বিস্তারের লক্ষ্যেই এখন তৃণমূল কংগ্রেস এগোতে চায়। উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়াও, দক্ষিণের কেরলেও তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয়স্তরে কংগ্রেস দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে৷ কংগ্রেসের অন্দরের শীর্ষস্তরে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে অপছন্দ করার লোক বাড়ছে৷ UPA-র চেয়ারপার্সন হিসাবে সোনিয়া গান্ধী দীর্ঘদিন ধরেই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছেন না অসুস্থতার কারণে৷ কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষনেতা চাইছেন UPA-র চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরে আসুন সোনিয়া৷
বিজেপি বিরোধী জোটের মুখ নিয়ে কিছুদিন ধরেই অন্য রাজ্যের বেশ কয়েকজন নেতার নাম নিয়ে আলোচনা চলেছে। তবে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একক ক্ষমতায় মোদী-শাহ জুটিকে পর্যদুস্ত করার পর সেই সব আলোচনা অনেকটাই এখন স্তিমিত। কংগ্রেসে পরিচালন ক্ষমতায় গান্ধী পরিবারের কর্তৃত্ব ধীরে ধীরে রাশ পেতে চলেছে। অনেক আগেই গান্ধী পরিবারের ‘বিরোধী’ এআইসিসি’র ২৩ জন শীর্ষনেতা জাতীয়স্তরে বিজেপি-বিরোধী ‘বিকল্প-মঞ্চ’ গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ এই মঞ্চ কংগ্রেসকে গান্ধী পরিবার থেকে মুক্ত করার কাজে সচেষ্ট। এরফলে সোনিয়া গান্ধীর বিকল্প হিসাবে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য নাম কি হবে তা আগামী দিনেই জানা যাবে।

কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব ইদানিং অপছন্দ করছেন৷ কারণ সোনিয়া গান্ধীর ‘অসুস্থতা’, আর ‘ট্যুইটসর্বস্ব’ রাহুল গান্ধীর রাজনীতি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা অসন্তুষ্ট হলেও কংগ্রেস মনোভাবাপন্ন মানুষ অন্য দলে পা রাখবেন না৷ সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই ২০২৪-এর নির্বাচনে ‘দীর্ঘমেয়াদি- বিকল্প’ হতেই পারে৷
জাতীয়স্তরে এই ফাঁকটাই কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি৷ আর এই কাজে দিল্লিতে তৃণমূলের দরকার উদ্যমী, রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন, নানা ভাষায় পারদর্শী এক মুখ। এই গুণসম্পন্ন চরিত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তৃণমূলে আর কেউই নেই৷ তার উপরে অভিষেক একজন নির্বাচিত সাংসদও৷
একাধিক রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিও কংগ্রেসের নেতৃত্ব মানতে রাজি নয়৷ এদের এক অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকে পছন্দ করে৷ বিভিন্ন দলের এইসব ‘মত’- কে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কাজ অতি দ্রুত শুরু করা জরুরি। তাই রাজনৈতিক মহলের ধারণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই কাজে ব্যবহার করে ফসল ঘরে তুলতে চাইবে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেককে একদিকে বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তোলার কাজে সক্রিয় ভাবে হাত লাগাতে হবে। অপর দিকে বিজেপি-বিরোধী হাওয়াকে জোড়া ফুলের অনুকূলে নিয়ে আসার কাজও সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত করতে হবে। এ কারণেই তাঁকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে৷ তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত, আগামী দিনে যে বিজেপির মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে, তা নির্ণয় করতে অতিবড় পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*