অনুপ বৈরাগী:
কবি বলেছেন “বারের রাজা রবিবার … যা খুশি করিবার”। কথাটা হুবহু মিলে গেছে। তবে আমার ক্ষেত্রে নয়। আমার চারপাশে রাজা রাজড়াদের ক্ষেত্রে । যা খুশি চাইলেই করতে পারাটা আমার ডালভাতের থালায় মাটন বিরিয়ানির আদিখ্যেতার মতো। তাই “যাহা ছিলো করিবার” তাহা করিতে করিতে আরপাঁচটা দিনের মতো রবিবারটাও গত হইবেন ইহা নতুন নহে।
ফি বছর দু’মাস খাতায় কলমে থাকা। তাও আঁতেল ছাড়া কারোর চোখে ঠিক পড়েনা কোন গাছ থেকে কোমর দুলিয়ে কটা পাতা নেমে এলো ধরনীতে। আমার মতো জ্যামজনতার কাছে স্রেফ শীত আসছে, ধান কাটছে গোছের। খুব বেশি হলে নবান্নের খুচরো নেমতন্ন । তাও সেই ‘অ্যাপেনডিক্সের মতো অপ্রাসঙ্গিক হৈমন্তী’ পাত্তাড়ি গোটানোর দিন কতক আগে যা সিন ক্রিয়েট করছে বলবার নয়। দিন দুই গোমড়া মুখে বসে থাকলো তার পর হাউমাউ করে গতরাত থেকে বাংলা সিরিয়ালের নায়িকার সৎমার মেয়ের ননদের মতো রুদালিপনাল কান্না রবিবারেও বহাল রেখেছে। ঐ যে কবি বলেছেন আর ইনি সিরিয়াসলি নিয়ে যা খুশি করছেন।
কম্বল সরিয়ে গিন্নীর মুখে টোকা দিয়ে যখন বললাম আমি বেরোচ্ছি।বাসি চোখের দুপাতা সামান্য খুলে বলেছিলো “টিফিনটা করে যাও”।ঘড়ির ডায়ালে চোখ বুলিয়ে আমি ওটাকে “টিফিন করে নাও” শুনলাম এবং আরো কিছু রদবদলে “টিফিনটা করে নিও” হিসেবে মাথায় রেজিস্ট্রি করলাম। হ্যাঁ মশাই। এরকমই শুনতে হয়। আজ কি বার ভুলে গেলেন নাকি! মুচকি হেসে অবশেষে রুটিনমাফিক সময়ে বেরোলাম হেমন্তের এই সপসপে সকালেও।
পাড়ার গলি ছেড়ে বড়ো রাস্তায় দাঁড়ালাম। এখান থেকে স্টেশন যেতে মিনিট পাঁচেকের টোটো পথ। এই বাহনটি গত একবছরে সংখ্যা বাড়িয়ে এলাকার বেকার কার্তিকগুলোর ময়ূরবাহন হয়েছে।আর হবে নাই বা কেন। বিমুদ্রাকরণ হচ্ছে , বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে , জনগন বিস্ফোরণঃ হচ্ছে। বিকল্পবাহনিকরণই বা হইব না ক্যান ! টোটো কোম্পানির গাড়ি সারাদিন রাস্তার দুধার ধরে দুমুখে টোঁ টোঁ করে চরে বেড়াচ্ছে । কখনো একজন কখনো দুজন বা কখনো একেবারে ফাঁকা । আজ ব্যাপারটা অন্যরকম। একে বৃষ্টি দুয়ে রবিবার। অতএব “যা ইচ্ছে করিবার”। টাক মাথায় সাম্মানিক চুল গুলোর মতো হাতে গোনা যে কটা আসছে সবকটাই ভর্তি। অন্যদিনের মতো টোটো ড্রাইভার আমার চোখের ইশারা পড়ার চেষ্টা করছে না। কেমন যেন দেখেও না দেখার ভান করে পেরিয়ে যাচ্ছে আমার হাতনাড়াকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে । ফাঁক বুঝে দু দুটো ট্রাকের চাকা রাস্তায় জমা জল নিয়ে আলপনা মতান্তরে জলপনার দাগা দিয়ে গেছে কোমর থেকে পা অবধি। বিলো দ্য বেল্ট ব্যাপারটাকে হজম করে টোটো ধরতে বেশ দেরি হলো আজ।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় কিনা আমার জানা নেই তবে সংক্রান্তি যে আমার শিরে সেটা বেশ বুঝতে পারছি । স্টেশন চত্বর বেশ ফাঁকা । এমনিতেই আজ লেট। বিষ ফোঁড়ার মতো টনটনে ব্যাথাটা বুঝলাম যখন আমার উর্বর (?) মস্তিষ্ক আবিষ্কার করে ফেলেছে গতকাল ছিল মান্থলি টিকিটের শেষ দিন। টিকিট কাটতে কাটতে ট্রেনের সময় পার। তবুও যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ পৌষমাস। হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে দেখি আমার ট্রেন……
না মশাই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । হেহে।পাক্কা চারমিনিট লেট। অবাক হই নি। একে লোকাল ট্রেন দুয়ে বৃষ্টি আর তিনে তো তিনি “বারের রাজা……..” অতএব সুতরাং “যা খুশি করিবার”
Be the first to comment