ছাব্বিশের লক্ষে বঙ্গ বিজেপির ১৭ জেলায় সভাপতি বদল, পদ হারালেন একাধিক বিধায়ক, সরানো হল শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ তাপসকেও

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- লক্ষ্য ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে দলের সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিল বঙ্গের গেরুয়া শিবির। রাজ্যের পঁচিশটি সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হল। এর মধ্যে প্রায় ১৫ জনই নতুন বলে জানা গিয়েছে। এখনও ১৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতির নাম বাকি। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে তাও ঘোষণা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর।

বিধানসভা নির্বাচনের বাকি আর একবছর। তবে এখনও রাজ্য সভাপতি পদে সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরিকে বেছে নিতে পারেনি রাজ্য বিজেপি। এরই মাঝে আবার জেলা সভাপতিদের নিয়েও জল্পনা ছিল বিজেপির অন্দরে। এই আবহে দোলযাত্রার দিনে বাংলার ২৫টি সাংগঠনিক জেলার দলীয় সভাপতির নামের তালিকা প্রকাশ করল বিজেপি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় সভাপতি বদল হয়েছে। দলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা উত্তর শহরতলি, বারাসত, বসিরহাট, আরামবাগ, হাওড়া, জঙ্গিপুর, হুগলি, তমলুক, কাঁথি, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া সহ মোট ১৭টি জেলায় এবারে জেলা সভাপতি বদল করেছে বিজেপি। জেলা সভাপতি পদ হারিয়েছেন ৫ বিধায়ক। যে ২৫টি জেলার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ৮টি জেলায় পুরনো সভাপতিতেই ভরসা রেখেছে বাংলার গেরুয়া শিবির।
সম্প্রতি বিজেপিতে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। ‘দলবদলু’-দের দলে যোগ দেওয়া মাত্রই পদ বা টিকিট দেওয়া নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে একাধিক নেতা। সেই জায়গায় নির্বাচনের একবছর আগে বিজেপির অধিকাংশ পুরোনো সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বদল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
উল্লেখযোগ্য ভাবে, উত্তর কলকাতায় সংগঠনের দায়িত্ব রাখা হয়েছে তমোঘ্ন ঘোষের হাতেই। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন করা এই নেতা ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। এর পর ২০২২ সালে কল্যাণ চৌবেকে সরিয়ে তাঁকে উত্তর কলকাতায় সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শোনা যাচ্ছিল, হয়তো এই পদে অন্য কোনও নতুন মুখ আনা হতে পারে। বিজেপির দাপুটে কাউন্সিলর সজল ঘোষের নামও ভাসছিল বিভিন্ন মহলে। কিন্তু শেষমেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তমোঘ্নকেই উত্তর কলকাতার দায়িত্ব দিল দল। দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়েছে অনুপম ভট্টাচার্যকে।
তমলুকের জেলা সভাপতি তাপসী মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, বিধায়কদের আর জেলা সভাপতি রাখা হবে না। তা প্রতিফলিত হয়েছে নতুন তালিকায়। আরামবাগে বিমান ঘোষকে সরানো হয়েছে। কাঁথি থেকে অরূপ রায়কে সরানো হয়েছে এবং তমলুকে তাপসী মণ্ডল দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সেখানেও নতুন সভাপতির নাম দেখা যাচ্ছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি হয়েছেন সোমনাথ রায়।
অন্যদিকে, বসিরহাটে শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত প্রাক্তন সভাপতি তাপস ঘোষকে সরিয়ে দায়িত্বে আনা হল সুকল্যান বৈদ্যকে। একইভাবে আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব পেলেন হিন্দু সংহতির নেতা থেকে গত লোকসভা নির্বাচনে বীরভূমে বিজেপির প্রার্থী হওয়া দেবতনু ভট্টাচার্য। দেবতনু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।
একইভাবে আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় এতদিন সভাপতি ছিলেন পুরশুরার বিধায়ক বিমান ঘোষ। তার জায়গায় আনা হল প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুশান্ত বেরাকে। শ্রীরামপুরেও সভাপতি পদে বদল আনা হয়েছে। সেখানে জেলা সভাপতি করা হল সুমন ঘোষকে।
তালিকায় দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি  উত্তরবঙ্গের ৬ জেলা রয়েছে। কোচবিহারে দলের সভাপতি হয়েছেন অভিজিৎ বর্মন, জলপাইগুড়িতে শ্যামল রায়কে সভাপতির পদে বসানো হয়েছে। তিনি গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কনভেনর ছিলেন। বর্তমানে তিনি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের পিএ। শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলায় অবশ্য কোনও রদবদল হয়নি। এখানে অরুণ মণ্ডলকেই সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। শিলিগুড়িতে সভাপতি পদে একজনেরই নামই মনোনয়ন করা হয়েছিল। দক্ষিণ দিনাজপুরে সভাপতি হলেন স্বরূপ চৌধুরি।
উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতাপ সিংকে আর দক্ষিণ মালদায় সভাপতি হয়েছেন অজয় গাঙ্গুলি।
উল্লেখ্য, কোনও বিধায়ককে যে সাংগঠনিক জেলা সভাপতি করা হবে না, তা জানিয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বই। তাঁদের কথায়, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। পাশাপাশি জেলা সভাপতিদের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৬০ বছর নির্ধারিত করা হয়েছিল। আর এই নিয়োগের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ছিল বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ড এবং রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক অমিত মালব্যের উপরে।
এদিকে এখনও ১৮টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা বাকি বিজেপির। তবে এরই মাঝে জল্পনা শুরু হয়েছে বিজেপির নয়া রাজ্য সভাপতি নির্বাচন নিয়ে। রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের জন্য ২৪ জন জেলা সভাপতির সম্মতি প্রয়োজন। সেই সংখ্যা হয়ে গিয়েছে।

দেখে নিন এক ঝলকে বঙ্গ বিজেপির ২৫টা সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের তালিকা:-

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*