
রোজদিন ডেস্ক,কলকাতা:- ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্র বা ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সংরক্ষণ ও গবেষকদের কাছে পৌঁছে দিতে আরও এক পদক্ষেপ নিল কলকাতার ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার। এবার তারা সমঝোতা বা মউ সই করল ভারত সরকারে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে থাকা আইআইটি মাণ্ডির সঙ্গে। ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের লক্ষ্য, প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাণ্ডুলিলি নিয়ে গবেষণার পথ সুগম করা, এই বিষয়ে গবেষণায় উৎসাহ দেওয়া এবং পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে জোর দেওয়া। পাণ্ডুলিপির মধ্যে ভাগবত গীতা, পুরাণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈষ্ণব শাস্ত্রের উপরে তারা সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে।
দেশে যতগুলি আইআইটি রয়েছে সেগুলির মধ্যে বিশেষভাবে সুনাম অর্জন করেছে আইআইটি মাণ্ডি। তারা অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা বজায় রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেও সমীহ আদায় করে নিয়েছে। তাই প্রাচীন বিষয়ে শিক্ষাপ্রদান আধুনিক করার ক্ষেত্রে আইআইটি মাণ্ডির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করেছে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার, এর ফলে ভারতীয় দর্শনশাস্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে আরও বেশি করে প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের অ্যাকাডেমিক ডিন ডঃ সুমন্ত রুদ্র এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের সঙ্গে আইআইটি মাণ্ডির সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব, ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম সংক্রান্ত অ্যাকাডেমিক চর্চাকে প্রসারিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা এই উদ্যোগে অবদান রাখতে এবং গবেষণা ও শিক্ষার প্রসারে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
সমঝোতার ফলে এখন থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক, গবেষক ও ছাত্রছাত্রীদের পরস্পরের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ে কোনও বাধা থাকবে না। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণে সুবিধা হবে দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের। স্থির হয়েছে, প্রধান সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রাখা হবে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সংস্কৃত পাঠ ও বিশ্লেষণ এবং ভারতীয় জ্ঞানতন্ত্র বা ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম বিষয়ক অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রাম। এর মধ্যে বৈদিক দর্শনের উপরে অনলাইন কোর্সও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সংস্কৃত, প্রাচীন সংস্কৃত ও বাংলায় লেখা পুঁথি ডিজিটাইজ করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। আইআইটি মাণ্ডির পরিচালক ডঃ লক্ষ্মীধর বেহরা বলেন, “ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের বিষয়ে একটি মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করতে চলেছে আইআইটি মাণ্ডি যেখানে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। তাঁরা রিসোর্স পার্সন হিসেবেও কাজ করবেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে এবং ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম সহ বহু বিষয়ে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।”
গবেষণা ত্বরান্বিত করতে ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারকে একাডেমিক পরিকাঠামো, প্রশাসনিক সহায়তা এবং এখানকার শিক্ষকদের এইসব বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে আইআইটি মাণ্ডি। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সংস্কৃত ভাষা পাঠ ও বিশ্লেষণ, পাণ্ডুলিপি ডিজিটাইজেশন ও বহুবিষয়ক গবেষণায় সহায়তা করবে। এছাড়াও, ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারে যাঁরা পড়াশোনা করবেন তাঁদের সাহায্য করার পাশাপাশি গবেষকদের স্বীকৃতিও দেবেন। অনলাইন কোর্স ও শিক্ষক-প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম যাতে আরও আধুনিক হয়, সেই ব্যাপারেও ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারকে সহযোগিতা করবে।
ইসকনের গোবর্ধন ইকো ভিলেজের পরিচালক তথা আইআইটি বোম্বের প্রাক্তন ছাত্র গৌরাঙ্গ দাস এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “আইআইটি মাণ্ডির প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও দার্শনিক গবেষণার অভিজ্ঞতা একত্রিত হলে ভারতীয় নলেজ সিস্টেমে নতুন অ্যাকাডেমিক সুযোগ সৃষ্টি করবে।” এর ফলে বিশ্বজুড়ে এইসব পাণ্ডুলিপি !অ্যাক্সেস করার যাবে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
Be the first to comment