পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে রশ্মিতা শাহকে৷ তাঁর স্বামী অশোক শাহের শরীরে মিলেছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ৷ ভবানীপুরে খুন হওয়া গুজরাতি দম্পতির ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও নানা তথ্য ৷ যা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, অশোকের পেটের ডান দিকে ও গলায় গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে ৷ একমাত্র ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই ওই ধরনের ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনা ৷ এছাড়া তাঁর সারা শরীরেই ছোটখাটো ক্ষতের দাগ রয়েছে ৷ রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গুলিতেই মারা যান রশ্মিতা৷ লালবাজার সূত্রে খবর, রশ্মিতার মাথায় বুলেটের আঘাত রয়েছে ৷ এমনভাবে গুলি চালানো হয়েছে যে, বুলেট তাঁর ডান দিকের কান ফুঁড়ে বেরিয়েছে ৷ যেভাবে মারা হয়েছে তাতে তদন্তকারীরাও মনে করছেন, এই কাজ পেশাদার খুনি ছাড়া সম্ভব নয় ৷
আততায়ী যে শাহ দম্পতির পূর্ব পরিচিত, সে ব্যাপারেও একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা ৷ পুলিস সূত্রে খবর, খুনের দিন ঘরে খাবারের প্লেট ও জলের গ্লাস সাজিয়ে রাখা হয়েছিল ৷ তদন্তকারীদের প্রশ্ন, অপরিচিত ব্যক্তির জন্য কেউ খাবারের প্লেট ও জলের গ্লাস কেন সাজিয়ে রাখতে যাবে? কোনও পরিচিত ব্যক্তির আসার কথা ছিল বলেই সেগুলি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল৷ এছাড়া ঘরের ভিতর কারও জোর করে ঢোকার কোনও চিহ্ন মেলেনি৷ যা ইঙ্গিত করছে, আততায়ী শাহ দম্পতিকে চিনত ৷
তবে খুনের মোটিভ পুলিসের কাছে এখনও স্পষ্ট নয় ৷ খুনের পর হাতের বালা, কানের দুল, গলার চেন, আংটি, দামী ফোন, নগদ ২০-৩০ হাজার টাকা হাতানোয় মনে হতে পারে, লুটপাটের উদ্দেশ্যেই তাঁদের খুন করা হয়েছে ৷ কিন্তু তাই বলে এত নৃশংসভাবে খুন করতে গেল কেন? জিঘাংসা বা অন্য কোনও কারণ না থাকলে সচরাচর এত নৃশংসভাবে খুন করা যায় না ৷ এমনটাই বলছেন তদন্তকারীরা ৷
পারিপার্শ্বিক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিস মোটামুটি নিশ্চিত, আততায়ী একা ছিল না ৷ সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল ৷ তারা জানত কোন সময় গেলে বাড়িতে দু’জনকে একা পাওয়া যাবে ৷ পুলিসের একটি সূত্রের মতে, এর থেকে বোঝা যায়, আততায়ীরা আগে থেকে শাহ দম্পতির গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছিল ৷ সেই মতো সোমবার দুপুরে তারা ভবানীপুরের বাড়িতে যায় এবং দুপুর দেড়টা থেকে দু’টোর মধ্যে খুন করে ৷
আততায়ীদের নাগাল পেতে বাড়ির আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা শুরু করেছে পুলিস৷ কিন্তু বাড়ির একেবারে উল্টোদিকে লাগানো একটি সিসিটিভির ক্যামেরা খারাপ ছিল৷ সেটির ফুটেজ পাওয়া গেলে তদন্তে অনেকটাই অগ্রগতি হত বলে দাবি তদন্তকারীদের৷ তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, অশোক শাহ তাঁদের ভবানীপুরের বাড়ি বিক্রির ব্যাপারেও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ প্রায় ৬০ লাখ টাকায় ওই বাড়ি বিক্রি নিয়ে কথাবার্তা চলছিল৷ সপ্তাহখানেক আগে এক লাখ টাকার চেকও অগ্রিম হিসেবে দিয়ে চুক্তি করা হয়েছিল৷ পুলিস এখন সেই ব্যক্তির খোঁজ করছে যাঁর সঙ্গে অশোকের চুক্তি হয়েছিল৷
Be the first to comment