খয়রাশোলে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির অফিসে বিস্ফোরণের পর খোদ জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলই দাবি করেছেন, বিজেপি কর্মীরাই পার্টি অফিসের দেওয়ালে বোমা ছুড়েছে। তাই বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে অফিস। যদি অনুব্রতর কথাই ঠিক হয়, তা হলে বীরভূমের পরিস্থিতি শাসক দলের জন্য চিন্তার বইকি। কারণ, সেখানে একচ্ছত্র লাঠি ঘোরানো ‘কেষ্টা’র কথাতেই স্পষ্ট তাঁর ডেরাতে ঢুকেও বোম মারার সাহস রাখছে বিরোধীরা। যার মানে একটাই, অনুব্রত-র দুর্গও আর অভেদ্য থাকছে না বিজেপি-র কাছে!
যদিও এই বোমা ছুড়ে মারার থিওরি মানতে চাননি এলাকাবাসীদের অনেকেই। তাঁদের দাবি পার্টি অফিসের ভিতর মজুত করে রাখা ছিল সকেট বোমা। যেগুলি ফেটেই এই ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধূলিসাৎ হয়ে যায় কাঁকড়তলা থানার বড়রা অঞ্চল কমিটির অফিস। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণ এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দলীয় কার্যালয়টি।
২০১২ সালে গোষ্ঠীদ্বন্দে খুন হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা গোলাম সাবের কাদেরি ওরফে বুড়ো। তাঁর স্মৃতিতেই তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির এই অফিস। যদিও হালে এই অফিসের দখল নিয়েছিল বিরোধী গোষ্ঠীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সামনেই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। খয়রাশোল ব্লকের বিবাদমান দুই গোষ্ঠী পঞ্চায়েত দখলে জন্য আগেই থেকেই বোমা মজুত করে রেখেছে বলে দাবি তাঁদের। এমনই কিছু বোমা রাখা ছিল পার্টি অফিসের ভিতরেও। সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
কংক্রিটের চাঙড় সরিয়ে ভেঙে পড়া দেওয়ালের একটি অংশে কালো নামে ওই এলাকারই এক তৃণমূল কর্মীর নাম ও নম্বর পাওয়া গেছে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে ওই পার্টি অফিস নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন উজ্জ্বল হক কাদেরি নামে একজন। কালো নিজেও আগে তাঁর গোষ্ঠীতেই ছিলেন। কিন্তু, বর্তমানে তিনি কাদেরিকে ছেড়ে দীপক ঘোষের গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অবশ্য বোম-মজুতের তত্ত্বে জল ঢেলে দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁরা বিশ্বাস রেখেছে অনুব্রত-তত্ত্বেই।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বীরভূম নিয়ে শাসক দলের যে উদ্বেগ রয়েছে তা এ ঘটনাতেই প্রমাণিত। জেলায় তৃণমূলের অন্দরে বিবাদ এখন এতটাই মাথা তুলেছে যে এক দল অপর দলকে শায়েস্তা করতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করছে। এ যেন মুষলপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে।
Be the first to comment