‘সংবিধান নয়, মনুস্মৃতিতে বিশ্বাসী বিজেপি’, সাভারকর মনে করিয়ে সংসদে তোপ রাহুলের

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক :-  সংবিধান-বিতর্কে সাভারকরকে আশ্রয় করে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি ৷ তাঁর কথায় উঠল মনুস্মৃতির প্রসঙ্গও।

এদিন লোকসভায় বিনায়ক দামোদর সাভারকরের লেখা থেকে উদ্ধৃতি পাঠ করেন রাহুল গান্ধী৷ তিনি বলেন, “সাভারকরের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, সংবিধানের সবচেয়ে খারাপ বিষয়টি হল, ভারতীয় সংবিধানে ভারতীয় কিছুই নেই। তিনি আরও বলেছেন, বেদের পর মনুস্মৃতি সেই গ্রন্থ যা আমাদের হিন্দু রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পূজনীয়। প্রাচীন যুগ থেকে আমাদের দেশের আচার, রীতিনীতির ভিত্তি-মনুস্মৃতি। আজ মনুস্মৃতিই আইন।”
রাহুল গান্ধি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “সাভারকর পরিষ্কার জানিয়েছেন, ভারতের সংবিধানে ভারতীয় কিছুই নেই। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, সংবিধানের জায়গা নেওয়া উচিত মনুস্মৃতির।” এখানেই বিজেপিকে রাহুলের প্রশ্ন, “আপনারা সংবিধানকে সমর্থন করছেন। তাহলে আপনারা কি আপনাদের নেতাকে সমর্থন করেন? কারণ, আপনি যখন সংবিধান রক্ষার কথা তুলছেন, তখন সাভারকরকেই ঠাট্টা করছেন। সাভারকরকে হেনস্থা করছেন। সাভারকরের অবমাননা করছেন।”
দেশের প্রতি বিজেপির মানসিকতা বোঝাতে সংসদের নিম্নকক্ষে দ্রোণাচার্য ও একলব্যের গুরুক্ষিণার গল্প বলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। তাঁর কাছে বুড়ো আঙুল জীবন ও দক্ষতার প্রতীক। রাহুল বলেন, “দ্রোণাচার্য একলব্যের বুড়ো আঙুল কেটে দিতে বলেছিলেন। ভারতের প্রতি ঠিক সেই আচরণই করছে বিজেপি সরকার। সমান্তরাল নিয়োগের মাধ্যমে সরকার দেশের তরুণ-পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের বুড়ো আঙুল কেটে নিচ্ছে।”
বোন প্রিয়াঙ্কার মতো এদিন রাহুলও জাতভিত্তিক গণনার কথা তোলেন। তিনি জানান, “সংসদে তিনি জাতভিত্তিক জনগণনা নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সেই কথা রাখবেন। দেশে নতুন ধরনের উন্নয়ন আনতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হবে।
এক সাংসদ রাহুল গান্ধিকে জিজ্ঞাসা করেন তাঁর ঠাকুমা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি সাভারকর সম্পর্কে কী ভাবতেন? এর উত্তরে রাহুল বলেন, “আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমি আমার ঠাকুমাকে সাভারকরের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।” এতে বিজেপি সাংসদরা রাহুলকে নিয়ে কটাক্ষ করেন। সেসবের উত্তর না দিয়ে কংগ্রস নেতা বলে চলেন, “ঠাকুমা বলেছিলেন, সাভারকর ব্রিটিশের সঙ্গে আপস করেছিলেন। তিনি ব্রিটিশদের চিঠি লিখে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। আরও বলেছিলেন, গান্ধিজি জেলে গিয়েছিলেন। নেহরুজি জেলে গিয়েছিলেন এবং সাভারকর ক্ষমা চেয়েছিলেন। সাভারকর সম্পর্কে এটাই ছিল ইন্দিরা গান্ধির ভাবনা।” রায়বরেলির সাংসদ রাহুল হাথরসের ধর্ষিতার প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, “আমি হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে বন্দি হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, অভিযুক্ত বাইরে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
রাহুলের প্রশ্ন, “সংবিধানে কোথায় লেখা আছে যে ধর্ষিতার পরিবার ঘরের মধ্যে বন্ধ থাকবে? এটা হয়তো আপনাদের (বিজেপি) বইয়ে লেখা আছে, সংবিধানে নয়।” রাহুলের দাবি, সরকার যদি নির্যাতিতার পরিবারের পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত না করে, তাহলে ‘ইন্ডিয়া’ তা করবে। এদিন সম্ভলের হিংসার কথাও বলেন রাহুল।
সংবিধানের স্থপতি বিআর আম্বেদকরের উদ্ধৃতি তুলে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “বিআর আম্বেদকর বলেছেন, যদি রাজনৈতিক সাম্য না থাকে তাহলে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সাম্য থাকবে না। আজ রাজনৈতিক সাম্য শেষ হয়ে গিয়েছে। সামাজিক সমানাধিকার নেই, অর্থনৈতিক সমানাধিকার নেই। আমি দেশকে দেখাতে চাই, কার বুড়ো আঙুলটা কেটেছেন আপনারা? আমি দলিত, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, কৃষক, শ্রমিকদের দেখাতে চাই, সরকার কার বুড়ো আঙুল কেটেছে?”
রাহুল গান্ধি লোকসভায় তাঁর সম্পূর্ণ বক্তৃতাটি কংগ্রেসের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কংগ্রেস ও ‘ইন্ডিয়া’ সংবিধান রক্ষা করবে। বিজেপি ও আরএসএস মনুস্মৃতির সমর্থক। দেশটা সংবিধানের দ্বারাই পরিচালিত হবে, মনুস্মৃতির দ্বারা নয়।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*