রামনাথ কোবিন্দ পরবর্তী কে হবেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি, ইতিমধ্যে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করতে ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রস্ত বৈঠক করে ফেলেছে বিরোধী শিবির। সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারে বিজেপি।
বিজেপির প্রার্থী তালিকায় ইতিমধ্যে দু’টি নাম চর্চায় উঠে এসেছে বলে খবর। সূত্রের খবর অনুযায়ী, চর্চিত তালিকায় উঠে এসেছেন কেরালার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। আজ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। সেই বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হতে পারে বলে খবর।
বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তালিকায় অনেকের নাম ঘোরাফেরা করলেও, হঠাৎ কেরালার রাজ্যপালের নাম উঠে আসায় তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। বিজেপির একাংশের মতে, আরিফ মহম্মদ খানের মধ্যে এমন অনেক গুণ রয়েছে, যা বিজেপির আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে মানানসই। প্রথমত, আরিফ কট্টরপন্থী মুসলিম নন। মৌলবাদের বিরুদ্ধেও সরব হতে দেখা গেছে তাঁকে। এই ব্যাপার শাহ বানো মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকারের বিরুদ্ধে উগ্র মুসলিমদের কাছে মাথা নোয়ানোর অভিযোগ করে রাজীব মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন আরিফ মহম্মদ খান।
BJP-র আরেক অংশের মতে, নবী বিতর্কে ইতিমধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে মুসলিম দেশগুলি। কুয়েতে ভারতীয় পণ্যে বয়কটের মতো ঘটনা ঘটেছে। শুধু দেশের বাইরে নয়, এই ঘটনায় দেশের অন্দরেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে মোদী সরকারকে। এ ক্ষেত্রে আরিফ মহম্মদ খান রাষ্ট্রপতি হলে, ভারত যে সমস্ত ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল, সেই বার্তা দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এছাড়া কেরালার রাজ্যপাল শুধু উচ্চ শিক্ষিত নন, সেই বৈদেশিক রাজনীতি সম্পর্কে রয়েছে বিশেষ জ্ঞানও। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম দেশগুলির সম্পর্ক মজবুত করার পাশাপাশি মৌলবাদীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া যাবে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
আরিফ মহম্মদ খানের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মুর নামও উঠে আসছে বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে। আর এর পিছনে কাজ করছে ভোট রাজনীতি। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। আর এই সম্প্রদায় থেকে এখনও কেউ দেশের রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস। আর সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রোপদী মুর্মু নির্বাচিত হলে, উপজাতি গোষ্ঠীর জনসমর্থন গেরুয়া শিবিরে দিকে আসার সম্ভাবনা।
বিজেপির একটি অংশের মতে, উত্তরপ্রদেশ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের প্রচুর সমর্থন পেয়েছে দল। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হলে, সেক্ষেত্রে মহিলাদের কাছে একটি বড় বার্তা দেওয়া যাবে। আদিবাসী ভোটের পাশাপাশি মহিলাদের সমর্থন মিলবে বলে আশা তাঁদের। ২০২৪ লোকসভা ভোটে যা অ্যাডভান্টেজ বিজেপির কাছে।
দ্রৌপদী মুর্মু বা আরিফ খান, যাঁর নাম নিয়ে চর্চা হোক না কেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ-ই যে শেষ কথা, তা মানছেন BJP নেতারা। অতীতে দেখা গেছে, যে কোনও পদে অনেক নাম নিয়ে আলোচনা হলেও, শেষ মুহুর্তে চমক দেখিয়েছেন মোদী-শাহ। ২০১৭-তে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগী আদিত্যনাথকে বেছে নেওয়া সবচেয়ে বড় উদাহরণ। রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী কে, এখন সবাই তাকিয়ে আছেন মোদী-অমিত শাহের চমকের দিকেই।
বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নাম ঘোষণা নিয়ে জল্পনা হোক না কেন, তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কেননা, গেরুয়া শিবিরও তাকিয়ে আছে বিরোধীদের প্রার্থী কে হন সেদিকে। সূত্রের খবর, সরকার চাইছে বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বাছতে। এ ব্যাপারে বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজনাথ সিং-কে দায়িত্বও দিয়েছে গেরুয়া শিবির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতার সঙ্গে রাজনাথের সম্পর্ক বেশ ভালো।
ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে রাজনাথ মমতা সহ বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতার সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। অন্যদিকে, প্রার্থী বাছতেই হিমশিম বিজেপি বিরোধী জোট। শরদ পাওয়ার, ফারুখ আবদুল্লা এবং গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর না বলার পর এবার কাকে বাছবে বিরোধী জোট তাই নিয়ে বৈঠক এদিন। এমন পরিস্থিতে রাষ্ট্রপতি পদে সর্বসম্মতিতে প্রার্থী, না মোদী-শাহর চমক? সেদিকেই তাকিয়ে দেশ।
Be the first to comment