রোজদিন ডেস্ক :- ঝাড়খন্ড রাজ্যে বিজেপির তুরুপের তাস ছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের ফল দেখাল, সেই তাস বিজেপিকে তরাতে পারল না। সর্বশক্তি নিয়োগ করেও মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট। ৮১ আসনের বিধানসভায় ইন্ডিয়া জোট ৫৬টি আসন দখল করতে চলেছে আর বিজেপি ২৪ আসন। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার নেতা হেমন্ত সরেন। রাজ্য গঠনের পর এই প্রথম এমনটা ঘটতে চলেছে।
ইন্ডিয়া জোটের কাছ থেকে ঝাড়খন্ড ছিনিয়ে নিতে বিজেপি চেষ্টার কসুর করেনি। ভোটের আগে থেকেই তারা ঠিক করেছিল, বাংলাদেশ থেকে ‘মুসলমান অনুপ্রবেশকে’ প্রধান হাতিয়ার করে তুলবে। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন ঘোষণার আগেই বিষয়টি তারা বড় করে তুলে ধরেছিল। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী বিজেপি সদস্য নিশিকান্ত দুবে সংসদে এ বিষয়ের অবতারণা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ঢুকে মুসলমানরা ঝাড়খন্ডের আদিবাসী–অধ্যুষিত এলাকার জনবিন্যাসে বদল ঘটিয়ে দিয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার অনুপ্রবেশের প্রশ্ন নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বেটি, রোটি, মাটি’ বাঁচানোর। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খন্ডে ঢুকছে। সেখানকার আদিবাসী নারীদের বিয়ে করছে, রাজ্যের মানুষদের রুটিতে ভাগ বসাচ্ছে ও আদিবাসীদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে। এভাবে তারা জনবিন্যাসেও বদল ঘটাচ্ছে। অথচ এই প্রচার আদিবাসী সমাজের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে ব্যুমেরাং হয়েছে। কারাগারে যাওয়ার আগে হেমন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব দিয়েছিলেন আরেক আদিবাসী নেতা চম্পাই সরেনকে। মুক্তি পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে নিলে চম্পাইকে বিজেপি দলে টেনে নেয়। কিন্তু তাতেও আদিবাসী সমাজের ভোটে ভাগ বসাতে তারা ব্যর্থ। কারাগারে থাকাকালে হেমন্তর স্ত্রী কল্পনা দলের হাল ধরেছিলেন। এবারের ঝাড়খণ্ড ভোটে উল্লেখযোগ্য ভাবে নারীদের সমর্থনও গেছে ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে।
নির্বাচনের জয় নিয়ে হেমন্ত সোরেন বলেছেন,‘আমরা হোমওয়ার্ক করেছিলাম। লড়াই কঠিন ছিল। অনেকটাই গ্রাউন্ড লেভেলে গিয়ে কাজ করেছি। টিমওয়ার্ক ভালো ছিল। মানুষের কাছে আমরা আমাদের বার্তা পৌঁছতে পেরেছি।’
অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির হারের পিছনে রয়েছে শরিকি দ্বন্দ্ব। এছাড়া এই ‘দলবদলু’দের পক্ষে ভোট দিতে অনীহা ছিল ভোটারদের একটি বড় অংশের। আর একটি ফ্যাক্টর হল গেরুয়া দলের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছিল না। ফলে সেটাও বিভ্রান্ত করেছে ভোটারদের। আর এখানেই বাজিমাত করেছে ইন্ডিয়া জোট।
Be the first to comment