চিরন্তন ব্যানার্জি, কলকাতাঃ মুখ্যমন্ত্রী নয় আপনাদের দিদি হয়ে এসেছি। প্রতিশ্রুতি দিলামসব দাবির বিচার করবো। শনিবার দুপুরে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনা মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার দুপুরে আচমকাই স্বাস্থ্য ভবনের একশো মিটার দূরে চিকিৎসকদের ধরনা মঞ্চে হাজির হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বেলা পৌনে ১টা নাগাদ যখন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি মা ফ্লাইওভারে ওঠে তখনই অনেকের ব্যাপারটা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। দেখা যায় সেই সন্দেহ অমূলক নয়। মুখ্যমন্ত্রী সোজা পৌঁছে গিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনে। ঠিক যেখানে জুনিয়র ডাক্তাররা প্রায় ৯৬ ঘণ্টা ধরে অবস্থান আন্দোলন করছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা। ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও। মুখ্যমন্ত্রী ধর্নাস্থলে পৌঁছতেই জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান তুলতে থাকেন। ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। দেখা যায় তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে মাইক তুলে নিয়েছেন। ডাক্তারদের শান্ত হতে বলেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতির আকস্মিকতায় ব্যাপারটা থিতু হতেই সময় লেগে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করতে এসেছি। যদি বলতে দেন খুশি হব’। কিন্তু এর পরেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠিক করতে সময় লাগে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, “শান্ত হন। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আপনাদের মাইকটা কি ঠিক করা যাবে? আমি যখন এসেছি তখন আমি কাজ করব”।
কোলাহল কিছুটা কমতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে পাঁচ মিনিট বলতে দিন। আমার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, আমি আমি আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্ণিশ জানাই।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাল সারারাত ঝড়জল হয়েছে, তাতে আপনাদের যেমন কষ্ট হয়েছে, আমারও কষ্ট হয়েছে। আমি ঘুমোতে পারিনি। আজ তেত্রিশ, চৌত্রিশ দিন হয়ে গেল। আমারও ঘুম হয়নি। কারণ, আপনারা যখন রাস্তায় থাকেন, আমাকেও জেগে থাকতে হয়। এত দুর্যোগের মধ্যে আপনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমি কথা দিচ্ছি, যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি আমার অফিসারদের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলব। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলি সরকার বিবেচনা করবে। আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সকলের সঙ্গে আমি আপনাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দ্রুত তদন্ত শেষ করুন। দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে আমি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতেই আমি এসেছি।’’
সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সকলের প্রতিনিধি থাকবে। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তা তৈরি করা হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। আমি সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করব না।’’ মমতা আশ্বাস দেন, রাজ্য সরকার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনও পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না। এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। আপনাদের বড় দিদি হয়ে এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন।’’
ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের যা খাবার দেওয়া হচ্ছে, নির্বিচারে তা না খাওয়ার অনুরোধ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা। যে যা দিচ্ছে, খেয়ে নেবেন না।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এ কথাগুলো বলেন, তখন জুনিয়র ডাক্তাররা কার্যত শান্ত হয়েই শোনেন। তাঁর কথায়, আপানার আমার ভাইবোন। আমি যদি আপনাদের ধর্না মঞ্চে আসতে পারি, তাহলে আমি বাকিটাও পারব। আমাকে কটা সময় দিন, এক দিনে তো পারব না। দুর্নীতি নিয়ে আপনাদের কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তদন্ত করে সাজা দেব। তাই আপনারা কাজে ফিরুন। আমি জোর করে তুলে দিতে চাই না। আমি আপনাদের দিদি হিসাবে বলতে এসেছি, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়। আমি আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী, সমসাথী। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।
Be the first to comment