রোজদিন ডেস্ক :- রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ‘গড়ে’ জয় ছিনিয়ে আনল শাসকদল। দাঁতই ফোটাতে পারল না বিজেপি। অধিকারীদের ‘খাসতালু’তে মাত্র ৬টি ভোট পেল বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমুল ১০১ টি আসন পেলো। একটি আসনে জয় লাভ করল নির্দল।
সকাল থেকেই বেশ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনায় খবরের শিরোনামে ছিল কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোট। বেলা গড়াতেই দেখা যায় উত্তেজনা হাতাহাতি পর্যায় চলে আসে। যার ফলে বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করতেও দেখা যায় বিজেপিকে। কিন্তু দিনের শেষে পটপরিবর্তন হয়ে নিজেদের গড়ে হেরে গেল গেরুয়া শিবির। উল্লেখযোগ্য ভাবে, কাঁথি আর মারিশদা ছাড়া কোথাও খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি, এছাড়াও কাঁথি–১ ব্লকে দু’টি আসন, কাঁথি–২ ব্লকের একটি আসনে জিতেছে বিজেপি।
প্রায় তিন বছর ধরে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে কোনও পরিচালন কমিটি ছিল না। স্পেশ্যাল অফিসার নিয়োগ করেই ব্যাঙ্ক চলছিল। ওই ব্যাঙ্কে পরিচালন কমিটি গঠনের জন্য ভোটের দাবিতে মামলা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেই মামলায় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সেই মতো ১৫ ডিসেম্বর ভোটের দিন স্থির হয়। কাঁথির তিন স্কুলে পাঁচটি বুথ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা থাকায় স্কুলে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়। পরিবর্তে কাঁথি পুর এলাকা থেকে বহু দূরে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এগরার প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর। সেই মতো রবিবার ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই কাঁথি ও এগরার পাঁচ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরকাড়া নিরাপত্তা ছিল। সেই সঙ্গে প্রতিটি বুথ এলাকাতেই মোতায়েন ছিল বিরাট পুলিশ বাহিনী। বুথ এলাকায় জারি ছিল ১৪৪ ধারা। এর জেরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলি থেকে কোনও ঝামেলার খবর সেই ভাবে মেলেনি। তবে কাঁথি, রামনগর, হেড়িয়া এবং কোলাঘাটে ভোটপর্ব চলাকালীন বুথের কিছু দূরে তৃণমূল ও বিজেপির সমর্থকেরা দফায় দফায় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই গন্ডগোলের মধ্যেই ভোটগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হয় দুপুর ২টোয়। তার পর দুপুর ৩টে থেকে শুরু হয় ভোটগণনা।
উল্লেখ্য, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটে জেতার দায়িত্ব পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক অখিলকেই দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরঙ্কুশ জয়ের পর অখিল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আইনি জটে এখানকার ভোট বানচালের চেষ্টা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট হয়েছে, যা রাজ্যের ইতিহাসে লজ্জার। তার পরেও মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’’
অন্য দিকে, শুভেন্দুর ভাই তথা বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কোথাও যে স্বাভাবিক ভাবে নির্বাচন হয় না, তা কাঁথি সমবায় নির্বাচনে স্পষ্ট হয়ে গেল। রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সমবায় ভোটেও নজিরবিহীন ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হল। এর পরেও একাধিক বুথে অশান্তি ছড়িয়েছে। বহু জায়গায় বিজেপির ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই চিত্র বুঝিয়ে দিল সমবায় ভোটে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতামত জানানোর সুযোগ পেলেন না।’’ যদিও এখন পর্যন্ত এই ফলাফল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন এই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু। দীর্ঘ সময় শুভেন্দুর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সমবায়ের রাশ তাঁর হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই ভোটে জেতার জন্য অধিকারী পরিবারের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। অন্য দিকে, স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতাও চাইছিলেন শুভেন্দুর ‘গড়ের’ এই সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন জিততে। বিধানসভায় কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোট নিয়ে আগে একপ্রস্ত আলোচনাও করেছিলেন মমতা। তখনই ভোটে দলকে জেতানোর দায়িত্ব অখিলকে দিয়েছিলেন তিনি। সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখালেন মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া অখিল।
Be the first to comment