শনিবার রাতভর ‘ফেনজল’-এর তাণ্ডবে তামিলনাড়ু – পুদুচেরিতে মৃত ৩, বিপর্যস্ত জনজীবন

Spread the love

রোজদিন ডেক্স: শনিবার রাতে উত্তর তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজল’। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগর থেকে স্থলভাগে প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে রবিবার সকালে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের মৌসুম ভবন।
শনিবার রাতে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে তামিলনাড়ুর উপকূল হয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে ‘ফেনজল’। গভীর রাত পর্যন্ত ‘ল্যান্ডফল’-এর প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ভারতের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ২.৩০টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার গতিতে তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরির উপর দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ এটি শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। সেটি রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে আরও শক্তিক্ষয় করে এই গভীর নিম্নচাপ সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকায়। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, চেন্নাইতে এই ঝড়ের প্রভাবে তিন জনের মৃত্যুর হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন পরিযায়ী শ্রমিক, যিনি রাতে এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
ঝড়ের কারণে শনিবার রাতভর চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু ঝড়ের দাপট বাড়ায় পরিষেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। রবিবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকে বিমান পরিষেবা। চেন্নাই বিমানবন্দরের কিছু অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অনেক বিমান বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। চেন্নাইগামী কিছু বিমান অন্য শহরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজল’-এর প্রভাবে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কেরালার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌসুম ভবন জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকাগুলিতে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ঝড়ের কারণে বহু গাছ উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের তরফে উদ্ধারকাজ চলছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার এবং রাস্তা থেকে গাছ সরানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় জল জমেছে, সেগুলোতে পাম্প বসিয়ে জল নিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজল’-এর ফলে কৃষি এবং পরিবহন খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলির মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দক্ষিণ ভারতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরও পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফেনজল’ দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী এলাকাগুলির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রাণহানি থেকে শুরু করে সম্পদের ক্ষতি, ঘূর্ণিঝড়টি অনেক কিছুর উপরেই প্রভাব ফেলেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে বলেই জানা যাচ্ছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*