বাংলার ‘বকেয়া’ আদায় করতে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচি শুরু হবে সোমবার। তার ঠিক আগে, রবিবার রাতে দলের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে নৈশভোজ-বৈঠক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে পৌঁছনোর পরেই। বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের দিল্লির সরকারি বাসভবনে বৈঠকটি হয়। সোমবারের যা যা কর্মসূচির পরিকল্পনা আগে করা ছিল, কী ভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, সোমবার রাজঘাটে গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কর্মসূচি শুরু হবে। মঙ্গলবার যন্তর মন্তরে ধর্না কর্মসূচি রয়েছে। আর এই দু’দিনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির মধ্যেই নতুন পরিকল্পনা— সংসদ ভবন অভিযান। তবে দ্বিতীয় দিনের চূড়ান্ত কর্মসূচির রূপরেখা কী হবে, তা ঠিক করা হবে সোমবার দুপুরে একটি বৈঠক করে।
তৃণমূলের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতানেত্রী আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রাজধানী পৌঁছন অভিষেক। এর পর দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সাংসদ সোজা চলে যান সৌগতের বাসভবনে। দলীয় সূত্রে খবর, সেখানেই কৌশল-বৈঠক ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সোমবারের কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত হয় ওই বৈঠকে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বৈঠক শেষে বেরিয়ে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ রাজঘাটে গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলীয় কর্মসূচির সূচনা হবে। সাংসদের কথায়, ‘‘আমাদের মূল আন্দোলনে ১০০ দিনের কাজে বকেয়া আদায় নিয়ে। এই ১০০ দিনের কাজ, যাকে মনরেগা বলে, তার সঙ্গে গান্ধীজির নিবির সম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণেই গান্ধীজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।’’
২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার কথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তৃণমূল সূত্রে খবর, সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকবেই। তার মধ্যে দলের কর্মসূচি কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত যা ঠিক হয়েছে, দলের বেশ কিছু সাংসদ এবং মন্ত্রী রাজঘাটে যাবেন। সেখানে যদি পুলিশি বাধার মুখে পড়েন দলের নেতারা, তা হলে বিকল্প পথ কী হবে, সেই সব স্থির করা হয়েছে বৈঠকে। দলীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতের বৈঠকে অভিষেক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার যাঁরা শিকার, তাঁদের নিয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সংসদভবনে যাবেন। সেখানে ‘ভুক্তভোগী’দের নিয়ে গিয়ে দেখানো হবে, কী ভাবে তাঁদের ‘হকের টাকায়’ নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। একটি সংসদ ভবন থাকতেও বাংলার মানুষের অধিকার খর্ব করে আরও একটি বিশাল সংসদ ভবন তৈরি করা হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, সোমবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করার কথাও রয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। রবিবারের বৈঠকেই স্থির হয়ে গিয়েছে, কারা কারা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু মন্ত্রী আদৌ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। বৈঠকে দু’ধরনের মত উঠে এসেছে। এক দলের বক্তব্য, মন্ত্রী দেখা না করলে ধর্নায় বসার প্রস্তাব দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এ ব্যাপারে সাবধানী পদক্ষেপের কথা বলেছেন। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে অভিষেক জানান, দলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে বেরিয়েই ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচির কথা তাঁর মাথায় আসে। সেই কর্মসূচিতেই তিনি বুঝেছেন, মানুষ কতটা বঞ্চিত। অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গিরিরাজ যদি দেখা করেন, তবে গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কোনও দরকার নেই।
তবে মঙ্গলবারের কর্মসূচি নিয়ে রবিবার রাতের বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই খবর মিলেছে তৃণমূল সূত্রে। ওই সূত্র জানিয়েছে, রাজঘাটে কর্মসূচির পর সাংসদ সুদীপের বাড়িতে একটি দলীয় বৈঠকও ডাকা হয়েছে। সেখানে অভিষেক ছাড়াও দলের ১৫ জন নেতানেত্রীর উপস্থিত থাকার কথা। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার দুপুরে একটা বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে মঙ্গলবারের কর্মসূচির রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। নেতানেত্রীরা মত বিনিময় করে সব স্থির করবেন। ওই বৈঠকে যা স্থির হবে, তা নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে জানাবেন।’’
দলীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার যন্তরমন্তরে দলের কর্মসূচি রয়েছে। তার জন্য দিল্লি পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। দলীয় সূত্রেরই দাবি, সেই অনুমতি মিলেছে। কিন্তু তার পরেও বিকল্প রাস্তার কথা ভেবে রাখা হচ্ছে। কারণ, যদি পরে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়, তা হলে কী কী করণীয়, তা নিয়ে মঙ্গলবারের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে আপাতত স্থির রয়েছে।
Be the first to comment