‘কাসাব কি বেটি’- শুনতে শুনতে কেটে গিয়েছে ১০ টা বছর, কী বলছেন দেবীকা? পড়ুন!

Spread the love
‘অবাক করে এই দেশ, তার চেয়েও বেশি হাসায় এই সমাজ’, কথা গুলো ১৯ বছরের মেয়েটি অনায়াসে বলে চলেছেন। ‘কাসাব কি বেটি’- শুনতে শুনতে কেটে গিয়েছে ১০ টা বছর। দাগ মেটাতে পারেননি দেবীকা নটওয়ারলাল রোটাওয়ান। পারেননি একটা সুস্থ জীবনের স্বপ্ন দেখতে।
পায়ের সেই গুলির দাগটাও যে এখনও মেটেনি। ২০০৮, নভেম্বরের ২৬। মনে পড়লেই ভিতরটা যেন কেঁপে ওঠে দেবীকার। ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে বাবা,মা, ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল সে। হঠাৎ গুলির আওয়াজ,বিস্ফোরণ। পালাতে গিয়ে গুলি লাগে দেবীকার। ঠিক ডান পায়ে আজমল কাসাব তাকে গুলি করে। ভাগ্যিস পড়েই জ্ঞান হারায়। না হলে জখম মেয়েটাকে মেরেই ফেলত জঙ্গি কাসাব। দেবীকার বয়স তখন ৯। এরপর..
২০০৯ সাল,  কাসাব কোর্টে দাঁড়িয়ে। সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমের হাত ধরে আদালতে দেবীকা।  ৯ বছরের জখম মেয়েটি কাসাবের চোখে চোখ রেখে বলেছিল, “এই লোকাটাই তাকে গুলি করেছে, এই লোকটাই অনেককে গুলি করেছে।” তারপর থেকে দেবীকাকে নিয়ে গর্ব নয় প্রশ্ন তুলেছে সমাজ। তাকে ‘কাসাব কি বেটি’  নামে প্রথমে স্থানীয়রা, পরে স্কুলের বন্ধুরাও ডাকতে শুরু করে।
৯ বছরের দেবীকা আজ ১৯-এর তরুণী। কাসাব কি বেটি এখন কি কেউ ডাকে? দেবীকার জবাব, “ডাকে না হয়ত। কিন্তু, আমি এখনও কোনঠাসা। সাক্ষী দিলাম, আশ্বাস পেলাম, কটাক্ষ জুটল, তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। আমি ‘কাসাব কি বেটি’-ই রয়ে গেলাম।”
৯ বছরের দেবীকা বাড়ি ফিরে প্রথম কয়েক মাস স্কুলে যেতে পারেনি। আতঙ্ক, ভয় শিশু দেবীকাকে ঘিরে রাখে। এরপর স্কুলে গেলেই চলে কটাক্ষ, ঠাট্টা, মজাক। সে নাকি ‘কাসাব কি বেটি’। স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় দেবীকা। অন্য স্কুলও তাকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। “বেশিরভাগ স্কুলই আমি   ইংরেজী বলতে পারি না,  এই কারণ দেখিয়ে নেয়নি। কিন্তু, আসল কারণ  আমি সহজেই বুঝতে পারি।”
খুব কষ্ট করে স্কুলের গণ্ডি পার করছে দেবীকা।একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সে। দুই ভাই, বাবাকে নিয়ে বান্দ্রার ১২ ফুট বাই ১২ ফুটের ঘরে থাকে। মা কে হারিয়েছেন কয়েক বছর আগেই।কয়েকটা আসবাব ঘরের অনেকটা জায়গা খেয়ে নিয়েছে। সুনীতা জানাচ্ছেন, “আমরা আশ্বাস পাই নতুন ঘরের, স্কুলের। সাক্ষী দিয়েছিলাম বলে উজ্জ্বল নিকম স্যার খুব খুশি ছিলেন। কিন্তু, ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমে। গত কয়েক বছর আমি শুধুই একটা সংবাদ। টিভিতে মুখ দেখাই, প্রত্যেকবার একই কথা বলি। আমার বা আমার পরিবারের কোনও সুরাহা হয় না।”
দেবীকা ঘুরে দাঁড়ায় প্রতিদিন। ‘কাসাব কি বেটি’ কাসাবের ফাঁসিতে খুশি। আইপিএস অফিসার হতে চায় সে। জঙ্গি দমন করতে চায় নিজে হাতে। পাশপাশি, বাবা, ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে চায় হাসি মুখে। আজমল কাসাব একটা নাম শুধু। তা বোঝেন দেবীকা।’কাসাব কি বেটি’- কটাক্ষ তাঁকে আর ভাবায় না। পেট চালানোর তাগিদ এই কটাক্ষের চেয়ে অনেক বড়। তাই দেবীকার আর্জি, ” শুধু কাসাব নয় আসল জঙ্গিদেরও ফাঁসি দেওয়া  হোক। ঠিক একইভাবে আমার মুখ নয় আমার আসল পরিস্থিতি তুলে ধরা হোক।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*