মিঠে রোদে দীঘার সৈকতে

Spread the love

কলকাতা থেকে প্রায় ১৭৪ কিলোমিটার দক্ষিন পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত পশ্চিমবাংলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র দীঘা। দীঘা আজকের নয়, সেই ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় কালে আবিষ্কার করা হয় এই বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রটির। ১৯৪৭ সালে দীঘার নবজন্ম হয় ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের হাত ধরে। তারপর থেকেই লোকমুখে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে দীঘা। অতীতের বীচ কিন্তু এখন আর নেই, বড়বড় বোল্ডার ও কংক্রিটের বেড়াজালে আটকে পড়েছে সমুদ্রের আগ্রাসন। বীচের চাঞ্চল্য তাই কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হয়েছে। তবে আগের থেকে বর্তমান দিনে খুব সুন্দর ভাবে সেজে উঠেছে দীঘার সৈকত। আলো ঝলমলে দীঘার সৈকত দেখলে রীতিমতো তাক লেগে যায়। এছাড়াও সমুদ্রকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য তৈরী হয়েছে পর্যটকদের বসার জায়গা।

নতুন দীঘার বিচটিও যথেষ্ট প্রশস্ত। বালির পরিমানও বীচে অনেকটাই বেশী। আর ভাঁটার সময় লাল কাঁকড়ার উপস্থিতিতে দীঘার বীচ যেন আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। এছাড়াও আছে অমরাবতী। পর্যটকরা চাইলেই অমরাবতী লেকের জলে বোটিং সেরে নিতে পারেন । ওল্ড আর নিউ দীঘার মাঝামাঝি গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম ম্যারিন অ্যাকোয়ারিয়াম। ২৩টি সুবিশাল কেসে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীবজগৎকে দেখে নেওয়া যায়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত খোলা থাকে বৃহত্তম অ্যাকোয়ারিয়াম।

দীঘার অন্যতম আকর্ষণ ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজিয়ামের তৈরী দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র। বিচিত্র সব মডেলে বিজ্ঞানের কারিকুরিতে শিক্ষামূলক বিজ্ঞানকে আরও মজাদার করা হয়েছে। ফান গ্লাসে আপনিও মেপে নিতে পারেন আপনার উচ্চতা। রয়েছে কঙ্কালের সঙ্গে সাইকেল রেস, ইগলুর মতো ঘরে বসে তারামন্ডল দর্শন, আরও কত কী রয়েছে। সায়েন্স পার্কটিও বেশ চমকে ভরা। এই চত্বরের জুরাসিক পার্কটিও দেখে নেওয়া যেতে পারে। কালীপুজো ও হোলি ছাড়া বছরের প্রতিটি দিনই সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে বিজ্ঞান কেন্দ্রটি।

প্রসারিত হচ্ছে দীঘা শহরটিও। যার নাম দেওয়া হয়েছে নিউ দীঘা। রেল স্টেশনটিও গড়ে উঠেছে নিউ দীঘায়। স্টেশন চত্বর থেকে বেরিয়ে ভ্যান বা টোটোয় চেপে পৌঁছে যাওয়া যায় ওল্ড বা নিউ দীঘার সমুদ্র সৈকতে। ওল্ড বা নিউ দীঘা দুই জায়গাতেই সপ্তাহের প্রতিটি দিনই মুখরিত হয়ে ওঠে দীঘা বীচ।

কীভাবে যাবেন?

দীঘা যাওয়া এখন আর কোনও সমস্যাই নয়। প্রচুর বাস যাচ্ছে কলকাতার শহীদ মিনার থেকে। এছাড়া উল্টোডাঙ্গা, দমদম, ডানলপ, গড়িয়া থেকে এসপ্ল্যানেড হয়ে মাত্র ৫ ঘন্টায় বাস পৌঁছে যাচ্ছে দীঘায়। এছাড়াও দীঘা কলকাতা ফেরার জন্য প্রচুর বাস রয়েছে। ছুটির দিনগুলিতে পর্যটকদের চাপ থাকার জন্য শহীদ মিনার থেকে স্পেশ্যাল কিছু বাসও ছাড়া হয়। এছাড়া কল্যানী, বসিরহাট থেকেও বাস পৌঁছে যাচ্ছে দীঘায়। এখন কলকাতা থেকে সারারাত দীঘায় যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়। নামখানা থেকেও দীঘা পৌঁছে যাচ্ছে বাস। বলা যায় রাজ্যের প্রায় বেশীরভাগ প্রান্ত থেকেই দীঘা পৌঁছে যাওয়ার জন্য চালু হয়েছে বাস। এছাড়া প্রাইভেট বাসে চেপে চলে যেতে পারেন দীঘা। রয়েছে এসি ও নন এসি প্রচুর বাস দীঘা যাচ্ছে।

বাসের থেকে অর্দ্ধেক ভাড়ায় পৌঁছে যেতে পারেন দীঘা। হাওড়া থেকে দীঘা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, কান্ডারী এক্সপ্রেস, হাওড়া-দীঘা এসি এক্সপ্রেস খুব কম সময়েই চলে যাওয়া যায় দীঘায়। এছাড়া শিয়ালদহ থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেসও পৌঁছে যাচ্ছে হাওড়ায়। দীঘা থেকে ফেরারও প্রচুর ট্রেন রয়েছে।

কোথায় থাকবেন?

দীঘা ও নিউ দীঘায় থাকার জন্য অসংখ্য হোটেল রয়েছে। রয়েছে এসি ও নন এসি বিভিন্ন রুম। ভাড়াও আলাদা- আলাদা। সৈকতাবাস, অপরাজিতা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিস্ট লজ, বেনফিস গেস্ট হাউস, রূপসী বাংলা, হোটেল ব্লু ভিউ, হোটেল আদিত্য ইন্টারন্যাশনাল ছাড়াও প্রচুর হলিডে হোম রয়েছে। যেমন, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, অন্ধ্র ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার হলিডে হোম রয়েছে দীঘায়। খুব কম খরচায় কলকাতা থেকে বুকিং করলেই পেয়ে যেতে পারেন একটি হলিডে হাম। তবে উইক এন্ডে বা ছুটিতে ভাড়া বাড়ে হোটেলের।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*