দলের ফতোয়া কার্যত উড়িয়ে তিনি বাংলাতেই থাকছেন। সাফ জানিয়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুধু তাই নয়, রাজ্যে বসেই তিনি কৌশলী ভূমিকা নেবেন বলে দলের ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর এক প্রশ্নের উত্তরে বৃহস্পতিবার দিলীপ বাংলায় থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “কোথাও যাচ্ছি না, বাংলাতেই থাকছি। প্রথমে এক-দু’বার যাব। কাজ শুরু করে দিয়ে আসব। এখানে বসে থেকেই যা করার করব। সবই তো ভারচুয়ালি হবে। যা রিপোর্ট নেওয়ার অ্যাপের মাধ্যমেই পেয়ে যাব।”
রাজ্য বিজেপি এখন ‘অভিভাবকহীন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু এখন তাঁকেই অন্য রাজ্যের অভিভাবক করে পাঠিয়ে দেওয়ার পিছনে রাজ্যের কতিপয় নব্য ও তৎকাল বিজেপি নেতাদের চক্রান্তই দেখছে দিলীপ শিবির। তাঁকে অন্য রাজ্যে পাঠানোয় বাংলায় বিজেপির অনেকেই কি খুশি হয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম না করে সুকান্ত-শুভেন্দুদের কটাক্ষ করে দিলীপের সপাট জবাব, “সরি, তাঁদেরকে খুশি করতে পারছি না।” দিলীপকে বাংলা থেকে সরানোয় খুশি গোপন করেননি বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। নতুন দায়িত্বের জন্য দিলীপকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি টুইট করেছেন।
ভিনরাজ্যে তাঁর দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে দলীয় নির্দেশকে অমান্য করার জন্য দিলীপ ঘোষকে পরামর্শ দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “সত্যি সত্যি দুঃখ হয় দিলীপদার জন্য। দলের কাছে দিলীপদা সবসময় বঞ্চিত। দিলীপদার প্রতি অবিচার হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত মত, দিলীপদার প্রতি সঠিক মূল্যায়ন হল না।” রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “দিলীপবাবু ভেবে দেখুন। যার হয়ে তিনি এত গলা ফাটান সেই দল তাঁকে সম্মান দিচ্ছে, নাকি অসম্মান করছে। আমি দিলীপবাবুকে বলব, যেভাবে বাংলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দলের এই নির্দেশ আপনি অমান্য করুন। বাংলা ছেড়ে যাবেন না। আপনি বাংলাতেই রাজনীতি করুন। আপনার সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মতভেদ আছে। কিন্তু বাংলা ছাড়া করার এই ইসু্যতে আপনার পাশে আছি।”
প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতির উদ্দেশে কুণাল ঘোষের আরও পরামর্শ, “আপনার সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু যে তৎকাল, দলবদলুগুলো আপনাকে ধাক্কা মেরে বাংলা থেকে সরাচ্ছে, আপনি কিছুতেই তাঁদের কাছে নতিস্বীকার করবেন না। আপনি বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করুন। আপনার লড়াইয়ে নৈতিক সমর্থন আছে।” অবশ্য তাঁর প্রতি তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্য নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “তাঁরা আমার জন্য চিন্তিত তা জেনে খুব আনন্দ হচ্ছে। চিন্তা করবেন না। আমি বেশিরভাগ সময় বাংলাতেই থাকব।”
রাজ্য দলের বড় অংশের প্রশ্ন, যাঁর হাত ধরে বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী উত্থান, তাঁকে কেন বাংলার সংগঠন থেকে বারবার ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে? কেন তাঁকে অন্য রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে? এর পিছনে কি রয়েছে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের কয়েকজন নেতার কলকাঠি? এমন প্রশ্ন তুলে বঙ্গ বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন বলে খবর। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “দিলীপদার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা অনেক। তিনি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি। দিলীপদার দায়িত্বে ওই রাজ্যগুলিতে দলের সংগঠন শক্তিশালী হবে।”
Be the first to comment