রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- নতুন বছরের শুরুতেই জেলা সফরে মুর্শিদাবাদে এক সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের লালবাগে নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিউশন ময়দানের এক সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, যে কারোর প্ররোচনায় পা দিয়ে ওপারে যাওয়া চলবে না। তিনি জানিয়েছেন, কারো লক্ষ্য হল দুই দেশের মধ্যে গণ্ডগোল বাধিয়ে সরে পড়া। তাই কোনও মতে প্ররোচনায় পা দেওয়া চলবে না। সেই সঙ্গেই সীমান্তে শান্তিরক্ষার জন্য বিএসএফকে এগিয়ে আসার আর্জি জানান তিনি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুর্শিদাবাদে সীমান্ত রয়েছে। সেই সীমান্ত বিএসএফ দেখুক। আপনাদের উপর অত্যাচার হলে আমরা দেখব। তিনি সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বার্তা দেন, দয়া করে কারও প্ররোচনায় ওদিকে যাবেন না। কারণ অনেকের উদ্দেশ্য হল দাঙ্গা বাঁধিয়ে সরে পড়া। আমি চাই সীমান্তে বিএসএফ দায়িত্ব নিক। যাতে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমি লোকাল পুলিশকে বলব তাঁরা যেন মাইকিং করে ফিরে আসতে বলেন। নিজের হাতে কেউ যেন আইন তুলে না নেন তা নিয়েও এদিন সতর্ক করেন মমতা।
পাশাপাশি এদিন গঙ্গাভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এদিন তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ”নদীর পাড় ভাঙনে কত ক্ষতি হয় এই জেলার মানুষের। বাড়ি ভেঙে যায় প্রতি বছর। এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। কেন্দ্রকে বারবার বলা হয়েছে গঙ্গাভাঙন রোধে টাকা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাকে শুধু বঞ্চনা আর বঞ্চনা করা হয়েছে। বন্যার সময়, ভাঙনের সময় কেউ ফিরেও দেখে না। তাই বলছি, আমরাই সেই কাজ করে দেব। তাই গঙ্গা-ভাগীরথী ভাঙন রোধের জন্য ৬২.৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই টাকায় কাজ হবে।”
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলতে গিয়ে মমতার কথায় উঠে এল ২০২৩ সালে একশো দিনের কাজের টাকার দাবিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের দিল্লি অভিযানের কথা। সেবার তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করার সময় দিয়েও হাজির ছিলেন না কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। উলটে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কৃষি ভবনে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন অভিষেক, দোলা, বীরবাহারা। টেনেহিঁচড়ে তাঁদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ”একটা রাজ্যের চুনোপুঁটি মন্ত্রী। আমাদের প্রতিনিধিদের সময় দিয়েও দেখা করেননি। মানুষের জন্য লড়াই করতে গিয়ে অত্যাচারের মুখে পড়তে হয়েছে। আর যে পুলিশ করল, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হল না।”
এদিন মমতা বলেন, আগামী দিনে বড় হতে হবে। অনেক বড়। যদি কোনও ভয় আসে বলতে হবে, আমি ভয় করব না ভয় করব না। সবাইকে হাসিমুখে থাকতে হবে। দুঃখ আসবে, আবার ভালো দিন আসবে। একই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘লোভ না করলে ভালো থাকবেন। কেউ লোভ করবেন না। সরকারি যে প্রকল্পগুলি হচ্ছে, যদি একটাকাও চায় একটাকাও কাউকে দেবেন না। এটা সরকারের টাকা। এই টাকা নেওয়ার অধিকার গ্রামসভারও নেই, পঞ্চায়েতেরও নেই, জেলা পরিষদেরও নেই। কারোর নেই। যদি কেউ টাকা চায় থানায় গিয়ে ডায়েরি করবেন। যদি পুলিশ ডায়েরি না নেয় তবে আমার মুখ্যমন্ত্রীতে সরাসরিতে জানাবেন।’
প্রসঙ্গত, আজ মুর্শিদাবাদের লালবাগে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে ৩৪৮.১৭ কোটি টাকার মোট ১১১টি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন এবং ১৫০.৫৭ কোটি টাকার ৮৫টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আজকের এই সরকারি পরিষেবা প্রায় ৬২ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হল বলেই জানান মমতা।
উল্লেখ্য, এই জেলার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয় নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিউশনের ২০০তম বর্ষ পূর্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী ২৫ লক্ষ টাকা এই বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দেন।
Be the first to comment