জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর
“আয়রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে ড্যাং কুরকুর ড্যাং কুরাকুর বাদ্দি বেঁধেছে গাছে শিউলি ফুটেছে কালো ভোমরা জুটেছে” মনে পড়ে ছোটবেলা থেকে সকলেই এই গানটি শুনে বড় হয়েছেন। এই গানটি শুনলে ও গানের মধ্যে দিয়েই পুজো পুজো গন্ধ এসে যায়। ঠিক তেমনি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো যার জন্য দীর্ঘ এক বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন আপামর বাঙালি। পুজো মানে ভোরবেলা শিউলি ফুলের গন্ধ, পুজো মানে শিশিরের জমা বিন্দু, পূজো মানেই সাদা কাশফুলের বনে কাশ গাছের মাথা দুলানি, পুজো মানে আকাশে পেঁজা তুলোর ন্যায় মেঘ, পুজো মানেই বাঙালির মনে আবেগের শিহরণ, পুজো মানেই মহালয়ার সকালে রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে দেবীর চণ্ডীপাঠ, পুজো মানেই মহালয়ার সকালে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে নদীতে তর্পণ, যা থেকে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে শুরু হয় মাতৃ পক্ষের সূচনা এবং এই মহালয়ার পুণ্য তিথিতেই দেবী দুর্গার চক্ষুদান হয় বিভিন্ন কুমোরটুলিতে মৃৎশিল্পীদের হাতে। এই সব কিছু মিলিয়ে আপামর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা শুরু হয়ে যায়। মূলত, হাতেগোনা আর কয়েকদিন রয়েছে দেবী দুর্গার বোধন অর্থাৎ বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের। তার আগেই সারা রাজ্যের পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন কুমোরটুলি থেকে শুরু করে বারোয়ারি পুজো, ক্লাবের পুজো বিভিন্ন বনেদি বাড়ীর দুর্গা প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা চলছে জোর কদমে। ঠিক তেমনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে প্রচুর বনেদি বাড়ি রয়েছে। যেখানে আজও নিষ্ঠা ও নিয়মের সাথে সেই সব বনেদি বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। আজ এমনই এক বনেদি বাড়ির দুর্গোপুজোর গল্প আমরা জানব, আসুন জেনেনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের সেই বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর গল্প। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। এই জেলায় রয়েছে আন্তর্জাতিক হিলি সীমান্ত। জেলার সদর শহর বালুরঘাট এবং দ্বিতীয় ব্যবসার প্রতিষ্ঠিত শহর গঙ্গারামপুর এই গঙ্গারামপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়িক উপকরণের কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে বারংবার যা দেশীয় ও বিদেশি ক্ষেত্রে এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম রয়েছে। এই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তথা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জোয়াদ্দারেরা। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গারামপুরের এই বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো খুবই বিখ্যাত এলাকা সহ জেলায়। উল্লেখ্য, এই জোয়াদ্দার বাড়ির পুজোর সূচনা হয় অবিভক্ত বাংলাদেশের পাবনা জেলার শাহজাদপুর গ্রামে। মূলত তারা জমিদার বংশ না হলেও সু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে আজও তারা উজ্জ্বল। এই জোয়াদ্দার বাড়ির দুর্গ পুজোর ইতিহাসে তিন পুরুষের নাম পাওয়া গেছে। মূলত তারাই এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা এবং দীর্ঘদিন ধরে এই পুজো হয়ে আসছে যে আজও ক্রমবর্তমান। তারা হলেন যথাক্রমে হরিনাথ জোয়াদ্দার, প্রাণনাথ জোয়াদ্দার ও বিনোদ বিহারী জোয়াদ্দার। এই তিন পুরুষ পর গঙ্গারামপুরের এই বাড়িতে পুজো করছেন বর্তমানে এই বংশের দুই পুরুষ যারা হলেন বড় ছেলে বিদ্যুৎ কুমার জোয়াদ্দার ও ছোট ছেলে অশোক কুমার জোয়াদ্দার। জানা গেছে এই জোয়াদ্দার বাড়ির দূর্গা পুজো দীর্ঘ ২৫০ বছরের পুরনো। ১৯৭৩ সাল থেকে অর্থাৎ ৪৯ বছর ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এই জোয়াদ্দার বাড়িতে পুজো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জোয়াদ্দার বংশের বর্তমান পুরুষরা জানান, এই দুর্গাপূজো অবশ্য কোনও স্বপ্নাদেশে পাওয়া নয় পূর্বপুরুষের বিশ্বাস ও একান্ত নিষ্ঠার কারণে সূচনা হয় পুজোর। জোয়াদ্দার বাড়ির এই দুর্গাপুজো ও দেবী দুর্গা ভীষণই জাগ্রত বলে জানা গেছে। প্রাচীন নিয়ম মেনে জন্মাষ্টমীর ঝিঙ্গা ষষ্ঠীতে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়, এবং পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। আশ্চর্যের বিষয় এই দুর্গা প্রতিমায় থাকেনা মহিষ এবং দশমীর পরের দিন একই আসনে পূজা হয় রক্ষাকালীর। এই পুজো নিয়ম ও রীতি মেনেই হয়ে আসছে কয়েক দশক ধরে। পুজোর অষ্টমী ও নবমীতে দেওয়া হয় অন্নভোগ, এলাকার সকল মানুষকে খাওয়ানো হয় সেই ভোগ। এই জোয়াদ্দার বাড়ির দুর্গাপূজোকে ঘিরে আনন্দ মেতে উঠেন এলাকার সকলেই। আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকদিন তার আগেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোদঙপাড়া এলাকায় অবস্থিত গঙ্গারামপুরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অশোক জোয়াদ্দারের বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলছে তুঙ্গে এবং প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও চলছে জোর কদমে। জোয়াদ্দার বাড়ির দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এলাকা মেলার ন্যায় হয়ে ওঠে এবং সকলে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। তাই এলাকাবাসী সহ গঙ্গারামপুরবাসিরা এখন শুধুই প্রহর গুনছেন। বর্তমানে এই জোয়াদ্দার বাড়ির দুর্গাপুজো বাড়ির দুই ভাই বিদ্যুৎ কুমার জোয়াদ্দার ও অশোক কুমার জোয়াদ্দার যৌথভাবে করে থাকেন। তবে এখন আপাতত দিন গুনছেন জোয়াদ্দার বাড়ির সকল সদস্যরা কারণ “মা” যে আসছেন।
Be the first to comment