সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে, দুম করেই এসে পড়েছিল মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন ‘হোয়াটস অ্যাপ’। দিনটা ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। রমরমা বাজারেও ফেসবুক সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল। কারণ, তাদের ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপটি দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল গুগল প্লে-স্টোরে। অন্য দিকে জন্মলগ্ন থেকেই উল্কার গতিতে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিল হোয়াটস অ্যাপ। তাই আবির্ভাবের পাঁচ বছরের মাথায় প্রতিদ্বন্দ্বী হোয়াটস অ্যাপকে WhatsApp Inc. এর কাছ থেকে ১৯.৩ বিলিয়নডলারে কিনে নিয়েছিল ফেসবুক।
এ বার সেই হোয়াটস অ্যাপই, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ফেসবুকের নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হোয়াটস অ্যাপ মেসেঞ্জারটিতে ধরা পরেছে একটি বিপজ্জনক ‘বাগ’ (bug)। যার সাহায্যে আপনার হোয়াটস অ্যাপে একটা মাত্র ভিডিও কল করে সাইবার ক্রিমিনালরা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নিতে পারে।
এ বার জেনে নিন Bug কী। এটি হলো সফটওয়্যারে থাকা কোনও ত্রুটি বা কোনও ফাঁক, যেটা সফটওয়্যার সিস্টেমকে ভুল বা অপ্রত্যাশিত ফলাফল দিতে বাধ্য করে বা সফটওয়্যারটিকে ভুল কাজ করতে বাধ্য করে।
হোয়াটস অ্যাপ ইউজারদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন গুগল প্রজেক্ট জিরো অফিসার তাভিস অরম্যান্ডি। তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডেলে করা ট্যুইটে তিনি জানিয়েছেন , “সত্যিই এটা একটা ভয়ঙ্কর সত্য। একটা মাত্র ভিডিও কল ধরলেই আপনার হোয়াটস অ্যাপ অ্যাকাউন্ট এবং ফোন পুরোপুরি হ্যাকড হয়ে যাবে। যদি হোয়াটস অ্যাপে আপনি অচেনা লোকের ভিডিও কল ধরে ফেলেন। এবং যদি লোকটি হ্যাকার হয়। সে সহজেই আপনার ফোন থেকে আপনার স্পর্শকাতর সব তথ্য উঠিয়ে নিতে পারবে। “
গুগল প্রজেক্ট জিরো-এর সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ নাতালিয়া সিলভানোভিচ জানিয়েছেন, হোয়াটস অ্যাপ মেসেঞ্জার সফটওয়্যারের বাগ বা ত্রুটিটি আছে হোয়াটস অ্যাপ ভিডিওকলের সঙ্গে যুক্ত সফটওয়্যারে। তাঁরা এটিকে বলছেন , ‘Memory corruption bug’ এবং এটি আছে হোয়াটস অ্যাপের non-WebRTC video conferencing implementation সফটওয়্যারের সাথে।
গুগলের প্রজেক্ট জিরোর সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরা, এ বছরেরই অগস্ট মাসে এই বিপজ্জনক ত্রুটিটি আবিষ্কার করেন। এবং এই অক্টোবর মাসেই ত্রুটিটি ঠিক করেন। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো এই ভয়ঙ্কর ত্রুটিটি হোয়াটস অ্যাপের iOS এবং Android দুটো ভার্শনেই পাওয়া গেছে। অতএব প্রত্যেক মাসে যে এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ হোয়াটস অ্যাপ ইউজার হোয়াটস অ্যাপ করেন, তাঁরা অক্টোবরের আগে হ্যাকারদের আওতায় ছিলেন। তাঁদের কার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানা যায়নি। কারণ নেটিজেনরা এতদিন জানতেন ইমেল, ফেসবুক, ট্যুইটার হ্যাক করা সম্ভব। কিন্তু একটা মাত্র ভিডিও কল করে হোয়াটস অ্যাপ হ্যাক! কত লোকে হোয়াটস অ্যাপে গোপনীয় তথ্য পাঠান। সে সব হ্যাকড হয়ে থাকতে পারে! হোয়াটস অ্যাপ দিয়ে ঢুকে ফোনে থাকা সব তথ্য হ্যাকাররা গায়েব করে দিতে পারে ! হোয়াটস অ্যাপ গ্রাহকদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে
পুরোনো হোয়াটস অ্যাপ আন-ইনস্টল করে গুগুল প্লেথেকে নতুন হোয়াটস অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন। আপাতত সমস্যার সমাধান করা গেছে ঠিকই। তবুও অচেনা কারও ভিডিও কল হোয়াটস অ্যাপ গ্রাহকদের ধরতে বারণ করছেন গুগল প্রজেক্ট জিরোর এক্সপার্টরা।
Be the first to comment