রাজ্যপালের প্রস্তাবিত সার্চ কমিটির দুই নাম নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

Spread the love

বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। সেই সংক্রান্ত মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। দেশের শীর্ষ আদালত আগেই জানিয়েছিল রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি সুপ্রিম কোর্টই গঠন করে দেবে। তিনদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার, রাজ্যপাল এবং ইউজিসির তরফে ৫ জন করে নামের তালিকা সার্চ কমিটির জন্য জমা দেওয়া হয়।কিন্তু সার্চ কমিটিতে আচার্য-রাজ্যপালের প্রস্তাবিত নাম নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রস্তাবিত নামের মধ্যে দু’জনকে নিয়ে বিতর্ক চরমে। এঁদের অন্যতম আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা ভিকে তিওয়ারি। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র ফয়জান আহমেদের রহস্যমৃত্যুতে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট।অন্য জন রাজস্থানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সহকর্মী মহিলাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এমন দু’জনের নাম রাজভবন কী করে সার্চ কমিটিতে সুপারিশ করল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামহলে। জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চলেছে রাজ্য সরকারও।
আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা ভিকে তিওয়ারিই অতিমারীর সময়ে গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি’র ফেসবুক থেকে অনলাইনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আবার রামায়ণে বর্ণিত পুষ্পকরথকে বিমানের সঙ্গে তুলনা করেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাঁকে নিয়ে সব থেকে বড় প্রশ্ন অবশ্য আইআইটি’র হস্টেলে অসম থেকে পড়তে আসা ছাত্র ফয়জান আহমেদের রহস্যমৃত্যু ঘিরে।আদালতে হাজিরা দিতেও বাধ্য হন তিওয়ারি।
আদালত লিখিত নির্দেশেও ছাত্রমৃত্যুতে খড়্গপুর আইআইটি’র বিরুদ্ধে তথ্যগোপন এবং অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টার উল্লেখ করে। সরাসরি অধিকর্তাকেই কাঠগড়ায় তোলে হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আদালতের নাছোড় মনোভাবে পুলিশ চার ছাত্রের বিরুদ্ধে র‍্যাগিংয়ে যুক্ত থাকার অভিযোগে এফআইআর করে। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার তত্ত্বও খারিজ হয়, খুনের মামলা রুজু করে আদালত গঠিত সিট এখন তদন্ত চালাচ্ছে।
অন্য জন বর্তমানে রাজস্থানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তিনি এমনিতেই শিক্ষামহলে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২০১৮-য় তিনি যখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে এক অধ্যাপিকা যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন। দীর্ঘ টালবাহানার পর ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিরসন কমিটি বা আইসিসি’র সুপারিশে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি।তাঁর পুনর্নিয়োগের বিরোধিতায় রাস্তায় নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও। পরে তাঁকে দিল্লি থেকে সরিয়ে রাজস্থানের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়।এমন লোকজনকে আচার্য-রাজ্যপাল উপাচার্য বাছাইয়ের সার্চ কমিটিতে সুপারিশ করায় তোপ দেগেছে রাজ্যের প্রাক্তন উপাচার্যদের মঞ্চ ‘এডুকেশনিস্টস ফোরাম’ এবং শাসকদলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’।
ফোরামের তরফে ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘রাজ্যপালের তালিকায় সব ভিন রাজ্যের মানুষের ভিড় কেন? রাজ্যে কি এক জনও শিক্ষাবিদ নেই, যাঁকে রাজ্যপাল সার্চ কমিটিতে রাখতে পারতেন?’ যদিও রাজভবন সূত্রের দাবি, যাঁদের রাজ্যপাল বাছাই করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা-প্রশাসনে দীর্ঘদিন যুক্ত।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*