পুজোর বয়স ৬১। প্রাচীনত্বের দিক থেকে পাল্লা দেবে কলকাতার সাবেক পুজোগুলিকে। ঐতিহ্যবাহী হাওড়া শহরের বি গার্ডেন আই এইচ ই ওয়েল ফেয়ার কমিটির দুর্গোৎসব এভাবেই চোখের আড়ালে বৃদ্ধ হয়েছে। পাড়া, পল্লী কিংবা জনপদের পুজোর যে আড়ম্বর থাকে, যে জৌলুস থাকে তা স্বাভাবিক কারণেই থাকে না আবাসনের পুজোয়। তাই আশেপাশের তরুণ পুজোগুলো যখন এলাকায় ছাপ ফেলতে শুরু করেছে, তখনও কার্যত নিজের খোলোসেই গুটিয়েছিল এই পুজো।
১৭ টি ব্লক, ১৩৪ টি ঘর নিয়ে তৈরি এই আবাসনের প্রতিটি আবাসিকের থেকে নেওয়া চাঁদাই ছিল পুজোর মূলধন। বাইরের পৃষ্টপোষক কোনওদিনই সেভাবে কৃপদৃষ্টি দেয়নি বৃদ্ধ আবাসনের প্রতি। তবু আবাসিকরাই নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করে এই পুজোকে টিকিয়ে রেখেছে। পুজোয় মূল চাঁদা ছাড়াও প্রতিটি দিনের ব্যয়ভার বহন এবং ভোগের টাকাও আবাসিকরা ভাগ করে নেন। এরই মধ্যে বিসর্জনে ঘোড়ার গাড়ি এনে একবার চমক দিয়েছিল এই আবাসন। তাদের ৪৬ তম বর্ষে গোটা এলাকাকে ডিজে’র সঙ্গে পরিচয় করানোর কৃতিত্বও তাদেরই।
সময়ের সঙ্গেই বার্ধক্য সঙ্গী হয়েছে আবাসনের তরুণ দিনের পুজো উদ্যোক্তাদের। তাই ৬১ তম বর্ষের পুজোর দায়িত্বে নবীনরা। এক ঝাঁক কিশোর, যুবক মিলে ভেবে ফেলেছে এ বার পুজোয় হবে কেদারনাথ দর্শন। অবসরের বয়স অতিক্রম করে আবাসনের পুজো ভাঙল রীতি। নিয়মমাফিক সর্বজনীন পুজো এই প্রথম হয়ে উঠতে চলেছে থিম পুজো। প্রথমে বাজেটের ধাক্কায় কিছুটা বেসামাল হলেও হাল ছাড়তে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা। বিজ্ঞাপন আনার বিষয়ে পেশাদার সংস্থাগুলি যৌবনের এই ভাবনায় হয়ত বিশেষ ভাবে আলোড়িত হয়নি। তাই বিজ্ঞাপনের বাজার এখনও তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে। তবু ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ভর করে দিন-রাত সকলে মিলে চেষ্টা করছে অর্থ সংগ্রহের। বৃষ্টির জন্য দফায় দফায় মণ্ডপ নির্মাণের কাজ ব্যাহত হলেও ইতিমধ্যে কাঠামো তৈরির কাজ অনেকটাই তৈরি। সব ঠিক থাকলে চতুর্থীর সন্ধ্যায় এই পুজোর ফিতে কাটা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রাজ্য সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও অচিরাচরিত শক্তি দফতরের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। এ ছাড়াও পুজো উদ্যোক্তারা আমন্ত্রণ জানাতে চলেছেন ক্রীড়া দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী, স্থানীয় বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরীকে।
কেদারনাথের মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে চতুর্থী থেকে দ্বাদশী পর্যন্ত সপরিবারে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠান করবেন। উদ্যোক্তাদের আশা, এই নতুন ভাবনা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে। তাঁরা প্রত্যাশা করছেন, পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে ভীড় উপচে পড়বে।
পুজো কমিটির সম্পাদক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে অভিনব ভাবনা ভাবতেই হবে। সেই বাধ্যবাধকতা থেকেই আমরা এই পরিকল্পনা করেছি। সকলের কাছে একটাই আবেদন করব, আপনারা অনেকেই হয়ত কেদারনাথ দেখেছেন, প্রত্যেক বছর অনেক বড় বড় থিমের পুজোও দেখেন। কিন্তু সীমিত ক্ষমতার মধ্যে অসম লড়াই করে এই অসাধ্য সাধন করা, হলফ করে বলতে পারি, এটা কোথাও দেখেননি। তাই পুজোর দিনগুলিতে আপনাদের গন্তব্য হোক বি গার্ডেন আই এইচ ই ওয়েল ফেয়ার কমিটির পুজো মণ্ডপ।
থিমের চমক ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহালয়ার দিন শিশু-কিশোরদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। এরপর উদ্বোধনের দিন আবাসিকদের গান এবং নাচের অনুষ্ঠান থাকছে। বাকি দিন গুলিও পুজো প্রাঙ্গণ জমজমাট থাকছে প্রদীপ প্রজ্বলন, শঙ্খ ধ্বনি, প্রশ্নোত্তর, গানের লড়াইয়ের মতো প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে। সব মিলিয়ে কেদারনাথে পার্বতী দর্শন এই আবাসনের ঘোষিত থিম হলেও আসল থিম লুকিয়ে আছে যুথবদ্ধতার শিকড়েই।
Be the first to comment