রোজদিন ডেস্ক,কলকাতা :- আরজি কর কাণ্ডে অপরাধী সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণার পরদিনও বিচারকের রায় নিয়ে ফের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে সরকারি সভা থেকেও এই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি নিজেও একজন আইনজীবী। ফলে আইন তিনিও জানেন। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, রাজ্যের অপরাজিতা বিল গোটা দেশে মডেল করা হোক।
আরজি কর ইস্যুতে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি বলেছিলাম, আমরা ফাঁসি চাই। যারা এত পৈশাচিক অত্যাচার করে, যদি কেউ দানবিক হয়, যদি কেউ পাশবিক হয়, তাহলে সমাজ কি মানবিক হতে পারে? সমাজকে মানবিক করতে হবে। মা-বোনদের সম্মানের স্বার্থে আমরা অপরাজিতা বিল পাশ করেছি বিধানসভায়। আমরা ডেথ পেনাল্টি রেখেছি সেখানে। আমরা শাস্তি রেখেছি। অ্যাসিডেও অনেক সময় মুখটুখ পুড়িয়ে দেয়, তার জন্যও আমরা শাস্তি রেখেছি। আমাদের সেই বিল এখনও পাশ করায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ফেলে রেখে দিয়েছে। আমরা চাই, সেটা একটা মডেল তৈরি হোক এবং দেশে এটা মেনে নেওয়া হোক।”
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আরও বলেন,”যাবজ্জীবন মানেটা কী? অনেক কেসে আমরা দেখেছি, দু’তিন বছরে বেরিয়ে গিয়েছে। প্যারোলে বেরিয়ে যায়। তাহলে অন্যায় করলেও তাকে ক্ষমা করে দেব? কেন বলবে? এই কেসটায় আমি সত্যি হতবাক। আমি নিজেও একজন আইনজীবী ছিলাম। আমি আইনটা পড়েছি। কুমারগঞ্জে যখন গুলি চলেছিল পার্থ সিংহ বর্মনের উপর, সেদিন বালুরঘাট কোর্টে ছাত্রছাত্রীদের হয়ে আমি একটা কোট পরে দাঁড়িয়েছিলাম এবং ছাত্রছাত্রীদের ছাড়িয়ে এনেছিলাম। আইনটা আমি একটু একটু হলেও বুঝি। আমি অনেকগুলো কোর্টে কেস লড়েছি। টাকার জন্য নয়, মানবিকতার স্বার্থে। কী করে বলেন জাজমেন্ট? ‘ইট ইস নট দ্য রেয়ার অফ দ্য রেয়ারেস্ট কেস!’ আমি মনে করি, ইয়েস, ইট ইস দ্য রেয়ার, সেনসেটিভ অ্যান্ড ভেরি ভেরি হিনিয়াস ক্রাইম।”
এদিন তিনি আরও বলেন, “ক্রাইম করে যদি কেউ বেঁচে যায়, সে তো আবার ক্রাইম করার চেষ্টা করবে। সেটাকে প্রোটেকশন দেওয়া আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ, ভাইদের দায়িত্ব দিচ্ছি, মা-বোনদের সম্মান রক্ষা করবেন। বোনদের দায়িত্ব দিচ্ছি, কোথাও কোনওরকম অসংগতি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কানে তুলবেন।
অন্যদিকে আশা কর্মীদের উদ্দেশ্যে এদিন মমতা বলেন, আশার মেয়েরা, আইসিডিএস-এর মেয়েরা, আপনারা এলাকায় ঘরে ঘরে কাজ করেন। আশার মেয়েদের জন্য, আইসিডিএস-এর মেয়েদের জন্য, আপনাদের হাতে কিছুদিনের মধ্যেই টেন্ডারটা ক্লিয়ার হয়ে গেলে, আগে আশার জন্য আমরা করছিলাম, ওটা অর্ডার দেওয়া হয়েছে, আইসিডিএস-এর জন্যও করা হবে। আপনারা হাতে একটা করে ফোন পাবেন। এই ফোনের মাধ্যমে আপনারা যোগাযোগ করে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে জানাবেন এবং আপনারা অ্যাকশন নেবেন।”
এদিন আরও একবার মমতার বক্তব্যেও মালদহের প্রয়াত নেতা বাবলা সরকারের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি আবারও বলেন, “বাবলার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দায়িত্ব আমি চৈতালিকে দিয়েছি ৷”
পাশাপাশি এদিন মালদার ডি.এস.এ. স্টেডিয়ামের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে মালদাবাসীর জন্য, মোট ১২১১ কোটি ৫৪ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২৩টি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং ৭৬টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। যার মধ্যে, মালদার চাঁচলে বিশেষ সংশোধনাগার, ১৩২/৩৩ কিলো ভোল্ট উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাস ইনসুলেটেড বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, গাজোল স্টেডিয়াম, চাঁচলের বারমাইসার সেতু, ইংরেজ বাজারের সমবায় গোষ্ঠী ট্রেনিং সেন্টার ও সমবায় ডাল ফ্যাক্টরি, যদুপুর সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র-সহ বহু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও, মঙ্গলবার মালদার প্রায় ২ লক্ষ মানুষের কাছে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেন।
Be the first to comment