২০১৪ সালের পর এত বড় সংঘর্ষ হয়নি ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে। কিন্তু গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে ইজরায়েল ও গাজ়া। প্যালেস্তাইনে একের পর এক আঘাত হেনে কার্যত রক্তনদী বইয়েছে ইজরায়েল। পাল্টা দিয়েছে হামাসও। কিন্তু ঢেলে সাজানো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইজরায়েলের, তাই খুব একটা আঘাত হানতে পারেনি হামাস। এই পরিস্থিতিতে গাজ়া ও জেরুজালেমের পশ্চিম প্রান্তে হিংসার তীব্র নিন্দা করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপ দাবি করলেন প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমৌদ আব্বাস।
সংঘর্ষের জন্য ইজরায়েলের সরকারকেই দায়ী করেছেন প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট। আব্বাস জানিয়েছেন, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন আব্বাস।
ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের বিবাদ দীর্ঘদিনের। বারবার স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের দাবি করে এসেছে প্যালেস্তাইনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাস। অন্যদিকে সেই প্রথম থেকে ইজরায়েলের দাবিটাও সাফ ছিল, তারা জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে চায়। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের পর এই প্রথম এত পরিমাণে ধ্বংসলীলা দেখল গাজ়া ও তেল আভিভ। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। রাষ্ট্রসঙ্ঘ তড়িঘড়ি শান্তি স্থাপনের কথা বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে বিবাদ অব্যাহতই।
জেরুজালেম লাগোয়া শেখ জারাহ এলাকায় প্যালেস্তাইন পরিবারের উচ্ছেদ থেকে শুরু এ বারের ইজরায়েল-হামাস উত্তেজনা। ইজরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট একাধিক প্যালেস্তাইন পরিবারকে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিতে যাচ্ছে, এই আশঙ্কা থেকেই আল আকসা মসজিদে অবস্থান বিক্ষোভ করছিল প্যালাস্তাইনিরা। শুক্রবার বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে তৎপর হয় ইজরায়েলের পুলিশ। সোমবার তা চরম আকার ধারণ করে। রাবার বুলেট, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ইজরায়েলের পুলিশ। যার ফলে আহত হন অন্তন ১ হাজারের বেশি প্যালেস্তাইনিরা। এরপরই মসজিদ থেকে ইজরায়েলকে পুলিশ প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দেয় প্যালেস্তাইনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাস। তারপরেও ইজরায়েল পুলিশ প্রত্যাহার না করলে রকেট ছোড়ে হামাস।
আর সেই রকেটের পাল্টা দিতে গিয়ে দফায় দফায় বিমানে হামলা চালায় ইজরায়েল। হামলায় ১০ শিশু-সহ অগণিত প্যালাস্তাইনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম মারফত। ইজরায়েলের বিমান হামলার পর হামাসের সামরিক শাখা তেল আভিভ লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। হামাসের পাল্টা হামলায় ইজরায়েলের একাধিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। হামাসের হামলার পর ফের ১৩০টি রকেট ছোড়ে ইজরায়েল।
গোটা ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশ স্রেফ শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে মধ্যস্থতা করার কোনও প্রস্তাব আসেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইজরায়েলের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। ব্রিটেন ইজরায়েলের ওপর হামলার নিন্দা করেছে। রাশিয়া কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। জার্মানি দুই পক্ষের মধ্যে শান্তির আহ্বান করেছে।
Be the first to comment