জমে উঠেছে ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াই। ১৪৪ টি ওয়ার্ডের পৌরবাসী রবিবাসরীয় সকালে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেরা বিগত দিনগুলিতে নিজের নিজের মতো করে প্রচার চালিয়েছে । আগামিকাল শহরের প্রায় ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ভোটার কলকাতা পৌরনিগম নির্বাচনে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই একাধিক অভিযোগ তুলে আসছিলেন বিরোধী দলের নেতারা। তার মধ্যে ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েনের ইস্যুটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এই সবের মধ্যেই রবিবার ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হবে সকাল ৭ টা থেকে, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা পৌরনিগম নির্বাচনের ভোট গণনা হবে ২১ ডিসেম্বর এবং ভোট প্রক্রিয়া ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ২০২০ সালের মে মাসে কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচিত সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেই হিসেবে প্রায় দেড় বছর দেরিতে ভোট হচ্ছে। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির তরফে বার বার ভোট করানোর দাবি তুললেও উদ্ভুত করোনা পরিস্থিতির কারণে এতদিন পৌরনিগমের নির্বাচন করানো সম্ভব হয়নি।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ২০১০ সাল থেকে কলকাতা পৌরনিগমের চালকের আসনে বসে রয়েছে। রবিবারের ভোটে নিজেদের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করতে তৎপর তৃণমূল। কাঁটায় কাঁটায় টক্কর দিতে তৈরি বিজেপি শিবিরও। কয়েক মাস আগে নীলবাড়ির দখলের লড়াইয়ে যতটা হুঙ্কার বিজেপি দিয়েছিল, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তবে রাজ্যের মূল বিরোধী শক্তি হয়ে উঠে এসেছে তারা। রবিবারের পৌরভোটে পদ্মশিবিরও চাইবে, কলকাতায় নিজেদের ক্ষমতা আরও বাড়াতে। বিধানসভায় একটি আসনও না পেলেও, ফের একবার নতুন উদ্যমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ভাগ্য পরীক্ষার জন্য তৈরি রয়েছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরও।
২০১৮ সালের পঞ্চায়তে নির্বাচনের ভয়ঙ্কর ক্ষত রয়েছে রাজ্যের শাসক দলের। নির্বাচনে জিতলেও চারিদিকে যে পরিমাণে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, তাতে মুখ পুড়েছিল তৃণমূলের। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দেড় বছর পর এই পৌর নির্বাচন তৃণমূল শিবিরের জন্য ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের এক কঠিন চেষ্টা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। বিশেষ করে জোড়াফুল শিবির এখন জাতীয় স্তরে নিজেদের সংগঠন সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে দলের একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরার তাগিদও দেখা যাচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে। তাই কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তাহলে যে সব রাজ্যে তৃণমূল সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছে, সে সব রাজ্যে একটি ইতিবাচক বার্তাও দেওয়া যাবে।
এবারের প্রার্থী তালিকা থেকে ৩৯ জন ‘নন-পারফর্মিং’ কাউন্সিলরকে বাদ দিয়েছে তৃণমূল। স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার চেষ্টা, কাউকে রেয়াত নয়। এদিকে শেষ বিধানসভা ভোটে, কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় বিজেপি ২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। গোটা রাজ্যে পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ। এই খামতির জায়গাগুলিও এবার পূরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে পদ্ম-শিবির। এর আগে ২০১৫ সালের কলকাতা পৌরনিগমের ভোটের তৃণমূল জিতেছিল ১২৪ টি ওয়ার্ড, বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৩ টি, বিজেপির দখলে ছিল পাঁচটি এবং কংগ্রেস দুটিতে জয়লাভ করেছিল। এই বার মোট ১৪৪টি আসনে নির্দল প্রার্থী সহ মোট ৯৫০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সেই ৯৫০ জনের মধ্যে ৪০২ জন রয়েছেন মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। উল্লেখ্য ১৯৯৫ সাল থেকে কলকাতা পৌরনিগমের মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।
Be the first to comment