রোজদিন ডেস্ক :- দেশের রাজধানীর বায়ু দূষণের প্রভাবে ভয়াবহ চেহারা দেখেছে গোটা দেশ। গঙ্গাপাড়ের শহরে সেই চিত্র যাতে পুনরাবৃত্ত না হয় তাই কলকাতা পুরসভায় জরুরি বৈঠক করলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ইতিমধ্যেই গঙ্গাপাড়ের দুই শহর কলকাতা ও হাওড়া বায়ু দূষণ নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে, যার জেরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রশাসনের।
কলকাতা পুরসভায় পরিবহণ দফতর, হাওড়া ও কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিক, দুই শহরের পুলিশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন ফিরহাদ। ছিলেন বোস ইন্সিটিউটের বিজ্ঞানীরাও। বাতাসের দূষণ মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কি করণীয়? এ ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া হয় বোস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের। পাশাপশি একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণ বৃদ্ধিতে লাগাম পড়ানো সম্ভব হবে বলেই আশা করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
এদিন বৈঠক শেষে মেয়র বলেন, “শীতকালে হাওড়ার দিক থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে ধুলো এবং দূষিত কণাও কলকাতায় প্রবেশ করছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও আরও বলেন, ‘‘দূষণ রোধে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধের পাশাপাশি নির্মাণ কাজ এবং যানবাহনের উপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।”
পুরসভার বৈঠকে কলকাতার বস্তি অঞ্চলে কাঠের উনুনের কারণে বাড়তে থাকা দূষণ ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে মেয়র পারিষদ সদস্য স্বপন সমাদ্দার (বস্তি উন্নয়ন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য) জানান, প্রথম পর্যায়ে ১৬টি বস্তির ১৫০০ পরিবারকে ‘ধোঁয়া বিহীন উনুন (স্মোকলেস চুলা)’ দেওয়া হবে। মেয়রের মতে, এই উদ্যোগ বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করার পাশাপাশি বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।
পাশাপাশি, শীত এলেই শহরের বিভিন্ন পথঘাট কাঠ, পাতা জ্বালিয়ে আগুন পোয়াতে দেখা যায়। আর সেই থেকে তৈরি ধোঁয়া হুহু করে বাতাসে দূষণ বৃদ্ধি করে। এদিকে নির্মাণ ক্ষেত্রে এখনও অনেক জায়গায় নির্মীয়মান ভবন না-ঢেকে খোলা অবস্থায় নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। পাশাপশি নির্মাণ বর্জ্য যথেচ্ছ খোলা অবস্থায় গাড়িতে নিয়ে যাওয়া শহরের বিভিন্ন অংশে ও সেগুলো জলজমি ভরাট করার ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। দুই শহরের রাস্তায় একাধিক গাড়ি যা বহু বছর পুরোনো যা থেকে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, সেটাও ভয়ঙ্কর পরিমাণ কার্বন কণা বাতাসে বৃদ্ধি করে।
দূষণ ঠেকাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই শহরে যথেচ্ছ কাঠ ও বাঁশ পুড়িয়ে শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য গরম তাপ নেওয়া বন্ধ করা হবে। এই বিষয় পুলিশকে সক্রিয় হতে আবেদন করা হয়েছে। যাতে এমন দেখলেই ধরপাকড় করা হয়। নির্মাণ ক্ষেত্রে যেসমস্ত স্থান খোলা, সেগুলো ডাকার জন্য বিল্ডিং বিভাগ নজরদারি করবে। ভ্যানও জাতীয় গাড়ি ও বহু পুরোনো কালো ধোঁয়া নির্গত হয় এমন যানবাহন দেখলে বাজেয়াপ্ত করার পথে যাবে পুলিশ ও পরিবহণ দফতর। জলা ভরাট হবে না। কোথাও কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে বা কাঠ জ্বালাচ্ছে এমন দেখলে সাধারণ মানুষ যাতে পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে পারে সেই জন্য ১০০ ডায়ালের মত বিশেষ নম্বর চালু হবে। যাতে ছবি তুলে পাঠাতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে। যার মাধ্যমে দূষণ পর্ষদ কর্পোরেশন ও পুলিশ মুহূর্তে জানতে পারবে। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার ঠেকাতে প্রচার নয়, কঠোর হতে চলেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
Be the first to comment