সিপিএম-এর হার্মাদরাই এখন বিজেপির ওস্তাদ ৷ কোতুলপুরের সভা থেকে এ ভাবেই একাধারে সিপিএম ও বিজেপিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বিজেপি বহিরাগত গুন্ডাদের রাজ্যে পাঠিয়েছে বলে তোপ দাগেন তিনি ৷ এ দিন বিজেপির ইস্তাহারকে কটাক্ষ করেছেন মমতা ৷ বিজেপি যাতে কোনওভাবেই ভোটবাক্স দখল করতে না-পারে, সে জন্য সব কর্মীদের সতর্ক করে দেন তৃণমূল নেত্রী ৷
সোমবার তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা মালিক ও শ্য়ামল সাঁতরার সমর্থনে কোতুলপুরে সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এ দিন শুরু থেকেই সিপিএম ও বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ শানাতে শুরু করেন তিনি ৷ বলেন, “সিপিএম-এর হার্মাদরা আগে এখানে অত্যাচার করত ৷ সেই হার্মাদরাই এখন বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে ৷ বিক্রমপুরের গ্রামে ওরা অত্যাচার করেছিল ৷ আমাকে তখন পুলিশ ঢুকতে দেয়নি ৷ কত লড়াই করেছি ৷ জয়রামবাটি, কোতুলপুর, বিক্রমপুর – এ গুলো আমার কাছে নতুন নয় ৷ এটা বাংলার নির্বাচন ৷ বহিরাগত গুন্ডাদের সেই ভোট দখল করতে দেবেন না ৷” সিপিএম ও কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে বলে অভিযোগ করেন মমতা ৷
এ দিন মমতা জানান, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বছরে চারবার করে হবে দুয়ারে সরকার ৷ অগস্ট, সেপ্টেম্বর, নভেম্বর, ডিসেম্বরে ৷ সেই সময় যাবতীয় পরিষেবা পেতে দরখাস্ত করতে হবে মানুষকে ৷ বিজেপির ইস্তাহারে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছেন, “ওরা শুধু আমায় টুকলি করে ৷ আমরা অনেক আগেই গ্রামে গঞ্জে 50 শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ করে দিয়েছি ৷”
বিজেপি যাতে কোনওভাবেই ভোট লুঠ করতে না-পারে সে জন্য কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তিনি বলেন, “কর্মীরা অন মেশিন দুবার অফ করবেন ৷ মেশিন খারাপ হয়ে গেলে একটু অপেক্ষা করবেন ৷ ঠিক হওয়ার পর দু বার অন দু বার অফ করে তা চালাবেন ৷”
এ দিন ভোটবাক্স পাহারা দেওয়ার উপরও বিশেষ জোর দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ বলেছেন, “নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর আস্থা রেখেও বলছি, আপনারা কোনও মতেই ভোটবাক্সকে চোখের আড়াল করবেন না ৷ এক মাস ধরে পালা করে ২০-৩০ জন করে পাহারা দেবেন ৷ আর এই সময় কারও থেকে কোনও খাবার এমনকী একটা বিড়িও খাবেন না ৷ ওরা বিড়িতে গাঁজা ভরে ভোটবাক্স দখলের চেষ্টা করতে পারে ৷”
এ দিনের প্রচারেও তাঁর পায়ে আঘাত লাগার জন্য বিজেপিতে দায়ি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর পায়ে আঘাত করে বিরোধীরা তাঁকে ভোটের মুখে বাড়িতে বসিয়ে রাখতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি ৷ বলেন, “আমি ভাঙি তবু মচকাই না ৷ যতক্ষণ শ্বাস চলবে, বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না ৷ এটা বাংলার ঠিকানা বাঁচানোর লড়াই ৷ আমি বাইরে থাকলে এক পা দিয়ে এমন শট মারব যে, মাঠের বাইরে করে দেব ৷ আর আমি হাঁটি মা-বোনেদের পায়ে ৷ তাঁরাই আমার শক্তি ৷”
পেট্রল, ডিজ়েল, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বেসরকারিকরণ-সহ নানা প্রসঙ্গ টেনে এ দিন বিজেপিকে তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মনে করিয়ে দেন বিরসা মুন্ডার ছবি বলে অন্য ছবিতে অমিত শাহের মালা দেওয়ার কথা ৷ মমতার কথায়, “বাইরে থেকে বর্গি এসে বাংলা লুঠ করতে চাইছে ৷ যাঁরা আগেরবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিজেপি পালন করেছে ? ওরা শুধু ভোটের আগে মিথ্যে কথা বলে ৷”
কোতুলপুরে ফের মহিলাদের হাতখরচ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, পাঁচ লক্ষ চাকরি, ঘরে ঘরে পানীয় জল, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে জুড়ে দেওয়া, মাটি সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫ হাজার একর জমিকে উর্বর করে কর্মসংস্থান-সহ নানা প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ বলেছেন, দশ লক্ষ সেল্ফ হেল্প গ্রুপের মহিলাকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবেন ৷
Be the first to comment