একের পর এক তৃণমূল নেতাকে যখন সিবিআই-ইডি হেনস্তা করছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছিল কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার লাগাতার জেরার নিন্দা করা তো দূরে থাক, উলটে ঠারেঠোরে তাদের কার্যত সমর্থন করেছেন কংগ্রেসের কোনও কোনও নেতা। অথচ সেই দলের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীর ইডি জেরার নিন্দায় সরব তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দিল্লিতে ১৭ দলের বৈঠকের শুরুতেই ইডির এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী। পাশে দাঁড়ান রাহুল গান্ধীর। আর এর পরই রাজনৈতিক মহল শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। তবে কি দূরত্ব ঘুচিয়ে আরও একবার কাছাকাছি তৃণমূল এবং কংগ্রেস?
বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নিয়ে বুধবার দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলকে খানিকটা চমকে দিয়ে বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন কংগ্রেসের তিন প্রতিনিধি। আর তাঁদের উপস্থিতিতেই রাহুলকে ইডির হেনস্তার তীব্র নিন্দা করেন মমতা। উল্লেখ্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় টানা তিনদিন রাহুল গান্ধীকে ৯-১০ ঘণ্টা জেরা করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আবার শুক্রবার তাঁকে ডাকা হয়েছে।
এদিকে কংগ্রেসের সেনাপতি রাহুলকে ইডির এই লাগাতার হেনস্তার প্রতিবাদে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। অভিযোগ, ইডি এভাবে একজন সাংসদকে হেনস্তা করতে পারে না। এবিষয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন অধীর। সূত্রের খবর, ইডির জেরার মুখে নিজের বয়ানে অনড় থেকেছেন রাহুল। স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইয়ং ইন্ডিয়া সংস্থা থেকে এক টাকাও নেননি তিনি। ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। যদিও ইডির পালটা দাবি, ২০১০ সাল অর্থাৎ সংস্থাটি তৈরি হওয়ার পর থেকে কোনও সেবামূলক কাজ করেনি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’। যদি করে থাকে তার প্রমাণস্বরূপ নথি ইডির কাছে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ সংবাদপত্রটি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’র মালিকাধীন ছিল।
তবে রাহুলের ইডি জেরা ফের একবার তৃণমূল এবং কংগ্রেসকে কাছাকাছি আনছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সম্প্রতি, কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের তুমুল সমালোচনা করেছিল তৃণমূল। ঘাসফুল শিবির বারবার অভিযোগ করেছে, বিজেপির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কার কংগ্রেস। আবার শতাব্দীপ্রাচীন দলটির দাবি ছিল, রাজ্যে-রাজ্যে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে কংগ্রেসের ঘর ভাঙছে তৃণমূল। দু’পক্ষের এত কাদা ছোঁড়াছুড়ির পরও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করতে মমতার ডাকা বৈঠকে যেভাবে কংগ্রেস প্রতিনিধি পাঠাল এবং সেই বৈঠকেই রাহুলের ইডি জেরার নিন্দায় সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো, তা বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই পারস্পরিক বোঝাপড়া নয়াদিল্লির বুকে নয়া কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করে কিনা, তা অবশ্য সময়ই বলবে।
Be the first to comment