নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বসে বিমান বসুদের ফিশফ্রাই খাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন ইস্যু হয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়র ঝালমুড়ি খাওয়া। আর কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ সেই ঘটনার এতদিন পরে খোলসা করলেন, আসলে দিদির গাড়িতে বসে ঝালমুড়ি খাওয়াটাই জট কাটিয়েছিল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রথম ইউপিএ আমলের প্রকল্প হলেও, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা এই প্রকল্পকে নগরোন্নয়ন দফতর থেকে রেলের অধীনে এনেছিলেন। এরপর চোদ্দোর ভোটে দিল্লিতে পালাবদলের পর ফের তা চলে যায় নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে। বাংলা থেকে মন্ত্রী হন বাবুল। আর রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় বাবুল যদি টুইট না করতেন, তাহলে কে জানত, গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো চলার জন্য সুড়ঙ্গ কাটার কাজটা সুগম করতে মমতার স্যান্ট্রো গাড়িতে ঝালমুড়ি খাওয়াই অনুঘটকের কাজ করেছিল!
ধীমান দাস নামের এক ব্যক্তি গায়ক-সাংসদ বাবুলকে টিপ্পনি কেটে টুইট করেন। তার সারবত্তা এই যে- আপনি জলসা করুন, ক্রিকেট দেখুন, দিদির সঙ্গে ঝালমুড়ি খান। আর যাই হোক রাজনীতিটা আপনার কাজ নয়। ধীমানের টুইটকে এড়িয়ে যাননি উত্তরপাড়ার ভূমিপুত্র। বাবুল প্রত্যুত্তরে লেখেন, “…গাড়ীর মধ্যে ঝালমুড়ি খেয়ে মিটিং না করলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো আর আসানসোলের ইএসআই হাসপাতাল, দুটোর কোনোটাই হতো না।” সেই সঙ্গে জনৈক ধীমানকে ‘অজ্ঞতার দাসত্ব’ না করারও পরামর্শ দেন হৃত্বিক রোশনের ডেবিউ ফিল্মের টাইটেল ট্র্যাকের গায়ক।
প্রসঙ্গত, বছর কয়েক আগে নেতাজি ইন্ডোরে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন মমতা এবং বাবুল। অনুষ্ঠান শেষে বেরোবার সময় মমতা দেখেন ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন বাবুল সুপ্রিয়। আসানসোলের সাংসদের গাড়ি তখন অনেকটা পিছনে। মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নেন তাঁকে। গাড়িতে উঠে পড়েন বাবুলও। এরপরই ঝালমুড়ি কিনে দু’জনে খেতে খেতে গল্প করেন। বাবুল পরে জানিয়েছিলেন, ঝালমুড়ির দামও দিয়েছেন দিদি।
বাবুলের এই ঝালমুড়ি খাওয়া নিয়ে বিজেপি-র ভিতরে কম জল ঘোলা হয়নি। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে তখন কার্যত মাথায় করে রেখেছে রাজ্য বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে রূপা এবং বাবুল দু’জনে একই দলের হলেও ভিন্ন মানসিকতার রাজনীতিক। রূপার কাছে বিরধী মানে সে বিরোধীই। তাঁর সঙ্গে ঝালমুড়ি কেন এক কাপ চাও খাবেন না। আর বাবুল সম্পূর্ণ উল্টো। তিনি যেখানে নরম হওয়ার সেখানে নরম, যেখানে গরম হওয়ার সেখানে গরম। এখনও আসানসোলে মলয় ঘটকদের সঙ্গে রোজ টক্কর চলে বাবুলের। এমনিতেই সঙ্গীত জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসে একেবারে দিল্লির মন্ত্রী হয়ে যাওয়াকে বিজেপি-র অনেকেই ভাল ভাবে নেয়নি। তার উপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এক গাড়িতে ঝালমুড়ি খাওয়া আগুনে ঘি ঢেলেছিল।
কিন্তু এ দিন বাবুল বুঝিয়ে দিলেন, ইস্ট-ওয়েস্টের আসল কানেকশনটা করে দিয়েছিল দিদির গাড়িতে বসে খাওয়া এক ঠোঙা ঝালমুড়িই।
Be the first to comment