পুরসভার কাজ নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পুরসভাগুলিকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এলাকা ঘুরে দেখা হয় না, সেই প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘প্রশাসক-মণ্ডলীতে যারা আছেন তাঁরা কেন এলাকা ঘুরে দেখেন না? কেন কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না?’ এ দিন তিনি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে নির্দেশ দেন যাতে প্রত্যক পুরসভায় একজন করে অবজারভার নিয়োগ করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি, টীটাগড় বা দমদম সব পুরসভার ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে মমতা বলেন, ‘মিউনিসিপ্যালিটিগুলো নিয়ে আমার কিছু প্রবলেম হচ্ছে।’ প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এলাকাগুলো কেন ঘুরে দেখছেন না? এলাকার কাজকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছেন না?’
পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে নির্দেশ দেন প্রত্যেক পুরসভায় একজন করে অবজারভার নিয়োগ করতে হবে। রাজ্যের সব পুরসভা ও পুর নিগমের জন্যই এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মমতা আরও জানান, ওই অবজারভারদের কাজ হবে পুর এলাকাগুলো ঘুরে দেখা। কোথায় কাজ হচ্ছে আর কোথায় কাজ হচ্ছে না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে তাঁদের। মমতা আরও বলেন, যারা ভালো কাজ করবে, তারা পুরস্কার পাবে।
সব পুরসভার কাজের সম্পূর্ণ রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাজটাই আসল, কাজ হচ্ছে কি না মানুষ সেই কৈফিয়ৎ চাইবে।’ তাই যেখানে মানুষের যত অভিযোগ আছে, তা খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি পুর প্রশাসকদের এলাকার বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বার্তাও দেন মমতা। তিনি বুঝিয়ে দেন, কোন কাজ কাকে করতে হবে।
এ দিন মমতা বিধায়কদের নির্দেশ দেন, যাতে তাঁরা এলাকার রাস্তা ও জল সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। আর স্কুলের ভবন তৈরির মতো কাজের দায়িত্ব সাংসদদের ওপর দেন মমতা। তিনি উল্লেখ করেন, ভাগ করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। প্রশাসক, জেলা সভাধিপতি, বিধায়কদের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে কি না, সেই খোঁজ খবরও নেন তিনি।
ইতিমধ্যেই পুরভোটের তোড়জোড় শুরু হয়েছে রাজ্যে। কলকাতা ও হাওড়া পুর নিগমের ভোট করার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। এই আবহে মমতার অবজারভার নিয়োগের নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যেখানে ভোট বাকি আছে, সেখানে ভোট না করে অবজারভার নিয়োগ করা হচ্ছে। তাদের কাজ হবে তৃণমূলের হয়ে ভোট বাড়ানো। এটা নির্লজ্জতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন নির্লজ্জতা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষেই সম্ভব।’ এত দিন কেন কাজ হয়নি? কে এর জন্য দায়ী? এত দিন বিচার করা হল না কেন? সেই প্রশ্নও তোলেন সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘যেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নেই, গণতন্ত্র নেই, সেখানে অবজারভার দিয়ে কী হবে?’ তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী কতটা অসন্তুষ্ট তা জানি না, সাধারণ জনগণ যে অসন্তুষ্ট এটা জানি।’ এতদিন পর কাজের খতিয়ান না নিয়ে অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Be the first to comment