মঙ্গলবার ছিল ঈদ-উল-ফিতর অর্থাৎ খুশির ঈদ। এই বিশেষ দিনটি রাজ্যের দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দু’ভাবে পালন করলেন। সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে রেড রোডে ঈদের নামাজ শেষে রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যেন আমাদের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি ঢোকাতে না পারে। সাচ্চে দিনের সঙ্গে আচ্ছে দিন আসুক। দেশের পরিস্থিতি ঠিক নেই ৷ সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশকে বিভাজিত করতে চাইছে ৷ তাই শান্তি বজায় রেখে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে ৷ পাশাপাশি মমতা বলেন, ধর্মের নামে দেশকে টুকরো টুকরো করা চলবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেড রোডে সংখ্যালঘু মানুষজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও আগেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দিয়েছিলেন, ঈদের উৎসবে তিনি প্রয়াত আনিশ খানের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন। সেই মতো ঈদের দিনটি আমতার নিহত ছাত্রনেতা আনিশ খানের পরিবারের সঙ্গেই কাটালেন তিনি। এদিকে মঙ্গলবার আনিশ খানের বাড়িতে এসেছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীও। একসঙ্গে বসে আনিশের বাবার সঙ্গে কথা বললেন মহম্মদ সেলিম, শতরূপ ঘোষ, নওশাদ সিদ্দিকীরা।
আনিস খানের বাবার সঙ্গে দেখা করার পর সোশ্যাল সাইটে তিনি লিখেছেন, আনিস খানের খুনের ইনসাফের দাবি আদায় করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা এই লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব, আইনের আদালতে এবং জনতার আদালতে। পিছিয়ে রইলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ ঈদের দিন তিনি রেড রোড থেকেই সরাসরি পৌঁছে গেলেন পার্ক সার্কাসে রিজওয়ানুর রহমানের বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা মাল্যদান করেন রিজওয়ানের স্মৃতিতে তৈরি বেদিতেও।
এদিন প্রথমে পার্ক সার্কাসের বাড়ির সামনে রিজওয়ানের স্মৃতিতে তৈরি বেদিতে মালা দেন মমতা। এরপর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন রিজওয়ানের মা, দাদা রুকবানুর রহমান এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এদিন প্রায় ৩ বছর পর রিজওয়ানুরের বাড়িতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। রিজওয়ানের বাড়িতে প্রায় ২৫ মিনিট মতো ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মহম্মদ সেলিমের প্রয়াত ছাত্রনেতা আনিশ খানের বাড়ি যাওয়া, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার রিজওয়ানুর রহমানের বাড়িতে যাওয়ার মধ্যে বিজেপি সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক নিয়ে সিপিএম এবং তৃণমূলের লড়াই দেখতে পাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, আনিশ খানের বাড়িতে মহম্মদ সেলিম চলে গেলেন, যাতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে কোনও ক্ষতি না হয় তাই তড়িঘড়ি রিজওয়ানুরের বাড়িতে ছুটলেন মমতা।
বিজেপির মতে, এ মূলত মধুভাণ্ড রক্ষার লড়াই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরাসরি বলেছেন, মহম্মদ সেলিম আনিশ খানের বাড়ি যাওয়ার কারণেই মমতা ছুটেছেন রিজওয়ানুরের বাড়ি। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। শাসক দলের তরফে দলের মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, প্রথম দিন থেকেই রিজওয়ানুরের পরিবারের পাশে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাই ঈদে তাদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে অন্য রাজনীতি যাঁরা খুঁজছেন, তাঁরাই আদতে এই নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন।
Be the first to comment