বিশ্ব জুড়ে করোনা পরিস্থিতি যেভাবে আবার উদ্বেগ বাড়াতে শুরু করেছে, তার দিকে সতর্ক নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে আবারও করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির কাছে মমতার পরামর্শ, যাতে আইসিসিইউগুলিকে ইনফেকশন মুক্ত রাখা হয়। বললেন, ‘স্পেন, আমেরিকায় একটু বেশি কোভিড হচ্ছে। এখানেও কেরলে হয়েছে। যাঁরা যাঁরা পারবেন, একটু বেশি করে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আমরা জোর করে কিছু করছি না। ব্যবসায় কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু ভিড় জায়গায় যখন কেউ যাবেন, একটু সতর্ক থাকবেন।‘
মমতা এদিন মনে করিয়ে দেন গঙ্গাসাগর মেলায় আমরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা এবারও খরচ করেছি। কুম্ভমেলা স্বীকৃতি পেয়েছে আমরা খুশি। কুম্ভ মেলা তো অনেক দিন পর পর হয়, প্রতি বছর হয় না। কিন্তু গঙ্গাসাগর প্রতি বছর হয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি দ্বীপের উপর গঙ্গাসাগর অবস্থিত। জল পেরিয়ে প্রত্যেকটা মানুষকে যেতে হয়। এক কোটি লোক সেখানে যাতায়াত করেন। সংখ্যাটা যদি বছরের হিসেবে ধরা হয়, তাহলে তো অনেক। গত বছরও আশি লাখের উপর মানুষ এসেছিলেন। এবছরও আমাদের ধারণা, যেহেতু কুম্ভ নেই, সংখ্যাটা এক কোটির উপর ছাপিয়ে যাবে। তারা যদি সাহায্য পেতে পারে, বাংলা কেন সাহায্য পাবে না? বাংলার মেলা কেন জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাবে না? সেই নিয়েও আজ আমি চিঠি পাঠিয়েছি।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন তীর্থস্থানকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের জন্য আমরা ৭০০ কোটি টাকার উপর খরচ করেছি। কালীঘাট মন্দির শুধু রিলায়েন্স একা করছে না। ওনারা শুধু সোনার চূড়াটা করছেন। আর ভিতরের কিছু অংশের কাজ করছেন। আমরা ১৬৫ কোটি টাকা খরচ করেছি। ওদের খরচটা হল ৩৫ কোটি টাকা। কীভাবে হকারদের সরিয়ে, তাঁদের অ্যাডজাস্ট করে কাজটা করা হচ্ছে!” পাশাপাশি দিঘায় হিডকো জগন্নাথ ধাম করছে। এটাতেও আমরা ২০৫ কোটি টাকা খরচ করছি। এছাড়া কচুয়া-চাকলায় ৯ কোটি ও ১৫ কোটি টাকা দিয়েছি। ইসকেন জন্য ৭০০ একর জমির অনুমতি দিয়েছি আমরা। তারকনাথ মন্দির, মাহেশের উন্নতি করেছি আমরা। তারাপীঠের উন্নয়ন করা হয়েছে। ফুল্লরা মন্দিরের জন্য এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণেও টাকা দেওয়া হয়েছে। জল্পেশ শিব মন্দিরের জন্য ৩১.৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।”
এছাড়াও এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন’ ব্যবস্থা নিয়ে কেন আপত্তি, তাও এদিন স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাদের ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো। বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন ভাষা। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। এক একটি রাজ্য এক একটি আঞ্চলিক সমস্যা আছে। এক এক সময়ে এক এক জায়গায় ভোট হয়। কেউ স্থায়ী সরকার পায়, কেউ পায় না। অনেক সময় সরকার গঠন হলেও আবার কিনে নেওয়া হচ্ছে। এই যে প্রবলেমগুলি আছে। একসঙ্গে ভোট হলে, আমাদের কী? আমাদের তো ভালই, একবার খাটতে হবে। কিন্তু সমস্যা কোথায় জানেন? যদি কোনও রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হয়, তাহলে কি হবে? ওয়ান নেশন-ওয়ান ইলেকশনের মানে হল – প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব ইলেকশন। যেটা আমেরিকায় আছে। ভারত কিন্তু সংবিধানে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়।”
Be the first to comment