সামনেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এবার বিরোধী শক্তিদের এককাট্টা করতে উদ্যোগী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, আগামী ১৫ জুন দিল্লিতে এনিয়ে যৌথ বৈঠক হতে পারে। সেখানে মূখ্য ভূমিকা নিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত দেশের বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোকেই একজোট করে একটা ছাতার নীচে আনার উদ্যোগ। বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকেই এই মিটিংয়ে থাকতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এদিকে এই জোটবদ্ধ করার ঘটনায় মমতার ভূমিকা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
ইতিমধ্যেই ২২জন নেতৃত্বকে চিঠি লিখেছেন মমতা। আমন্ত্রিতদের মধ্যে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন থেকে শুরু করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, তামিলনাডুর এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান রয়েছেন।
এছাড়াও চিঠি দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, আরজেডির সভাপতি লালুপ্রসাদ যাদব, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, আরএলডির জয়ন্ত চৌধুরী, জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমার স্বামী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা, পিডিপির সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি, শিরোমণি অকালি দলের সুখবীর সিং বাদল, সিকিম ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের পবন চামলিং এবং আইইউএমএল-এর কে এম কাদের মহিউদ্দিনকে।
এদের মধ্যে ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডির সঙ্গে অবশ্য বিজেপির সম্পর্ক বেশ ভালো। এছাড়া বাকি সকলেই তীব্র বিজেপি বিরোধী। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। দুদিন আগেই অসুস্থ অবস্থাতে সোনিয়া ফোনে কথা বলেন মমতা, ইয়েচুরি এবং শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। সোনিয়ার এই উদ্যোগের পরেই মমতার চিঠি দেওয়া রাজনৈতিক মহলের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে অবশ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী দেওয়া নিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার এবং শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে তৎপর হয়েছিলেন।
চিঠিতে মমতা লিখেছেন, দেশে এই মুহূর্তে গণতন্ত্র এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। একটি শক্তিশালী বিরোধীর জোট এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, রাষ্ট্রপতিই হচ্ছেন দেশের গণতন্ত্রের অন্যতম পাহারাদার। দেশে গণতন্ত্র যখন একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী জোট বা কন্ঠস্বর থাকাটা খুব জরুরি। চিঠিতে তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে প্রগতিশীল সমস্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে দিয়ে বিরোধী নেতাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে আজ প্রায় ভুলুন্ঠিত। এই অবস্থায় বিরোধীদের শক্ত প্রতিরোধের প্রয়োজন।
অন্যদিকে বিরোধী ঐক্য নিয়ে সক্রিয়তা দেখানো শুরু করলো কংগ্রেসও। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী ঠিক করতে মমতা-পওয়ার-সহ বিরোধী নেতাদের এক ছাতার তলায় আনার উদ্যোগ নিলেন সোনিয়া গান্ধীও। হাত শিবিরের বক্তব্য, এমন একজনকে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী করতে হবে যিনি বিজেপির তৈরি করা ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারবেন। কংগ্রেস জানিয়েছে, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী প্রার্থী দিতে ইতিমধ্যেই সোনিয়া গান্ধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন। সোনিয়া নিজে অসুস্থ, তাই অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনার ভার দেওয়া হয়েছে মল্লিকার্জুন খাড়গেকে। সোনিয়ার নির্দেশে খাড়গে ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ে গিয়ে পওয়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দল ঘর গোছানো শুরু করেছে। ২০২৪ সালকে পাখির চোখ করে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করার উদ্যোগও শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই বিরোধী শক্তির মুখ কে হবেন তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে। এমনকী কংগ্রেসকে নিয়েই এই জোট হবে নাকি কংগ্রেসকে ছাড়াই এই জোট হবে সেই প্রশ্নের মিমাংসা হয়নি এখনও। তবে সেই বিরোধী শক্তির অন্যতম প্রধান মুখ যে অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বলাই বাহুল্য। আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি মিটিং থেকেই কার্যত সেই বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়ে গেল।
Be the first to comment