দোলযাত্রার পূণ্যতিথি। সোহমের হয়ে সভা করতে এসে চণ্ডীপুরে মমতা বললেন, আগামী ২রা মে বাংলায় আর একটা দোলযাত্রা হবে। সবুজ আবিরে দোল যাত্রা হবে। এই আসনে মমতার প্রার্থী সোহম। অতীতে দুবার হেরেছেন সোহম, এবার কি মুখরক্ষা হবে? নন্দীগ্রাম ঢোকার আগে শেষ সভায় মমতা জোরালো ভোকাল টনিক দিলেন। পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা রইল, খেলাটা মা বোনের ওপর ছেড়ে দাও। মমতা বুঝিয়ে দিলেন, এবার তাঁর মাস্টারস্ট্রোক মহিলা ভোট।
মমতার সঙ্গে এদিন ছিলেন রাজারহাটের প্রার্থী তথা সঙ্গীতশিল্পী অদিতি মুন্সী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরুতেই বললেন,অদিতি আমার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ দোলের দিন অদিতিকে দেখলে সবাই খুশি হবে। আজ ও নন্দীগ্রামে গান গাইবে। দোল উৎসবে যোগ দেবে। বোঝা গেল নন্দীগ্রামে আজ সন্ধেটা উৎসবমুখর করতে চাইছেন মমতা।
চণ্ডীপুরে কেন সোহম, অনেকের মনেই দানা বেঁধেছে প্রশ্নটা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ব্যখ্যা করলেন। বললেন, “কাবুলকে টিকিট দিতে পারলাম না। কারণ ওঁকে দিয়ে অন্য কাজ করাব আমি। সোহম ফ্লিমস্টার বলে টিকিট পায়নি। ও অনেক কাজ করে। মিটিং মিছিল করে। আসে যায় চলে যায় না সোহম।” পাশাপাশি এও বললেন, সোহম অদিতি ভুলে যান। মনে রাখবেন প্রার্থী আমি। আমায় সরকার গড়তে হবে। অর্থাৎ সেই তত্ত্ব, ২৯১ কেন্দ্রে তিনিই প্রার্থী।
প্রতিটি সভার মতো এদিনও এল গদ্দার-প্রসঙ্গ। মমতা বললেন, নন্দীগ্রাম তো চন্ডীপুর দিয়েই যেতে হয়। জমি আন্দোলনের সময় আমাকে এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রেখেছিল। যারা বড় বড় কথা বলছে আজ। তাদের সেদিন আমি পাইনি। আমি ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। মীরজাফর গদ্দাররা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল। আমি খারাপ কথা বলিনা। আজ বললাম।
এবারের ভোট আট দফার। প্রথম দফায় মানুষ স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছেন। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এটা কি বিপর্যয়ের ইঙ্গিত, নাকি ওষুধ কাজ করেছে, হাওয়া পক্ষে? এড়িয়ে গেলেন মমতা। বরং বিজেপির আস্ফালনকে বিঁধলেন। বললেন, কাল ৩০ আসনে ভোট হয়েছে। কটা আসন পাব, আমি কী করে জানব? আমি কি মেশিনের মধ্যে ঢুকে যাব! ৩০ এ ২৬ কেন বলছ। বল না ৩০ টাই পাবে। ৩০ এর মধ্যে নাকি ২৬ পাবে। আমি একটাও বলব না। আমি মানুষের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
পাশাপাশি বহিরাগত তোপ দাগলেন আরও একবার মমতা। একই সঙ্গে আধা সামরিক বাহিনীর দাদাগিরি নিয়েও মুখ খুললেন। বললেন, “সেন্ট্রাল পুলিশ দিয়ে কাল কেন মেরেছে? উত্তর কাঁথিতে বহিরাগত গুন্ডা ধরা পড়ল। তাঁরা বহিরাগত। সোহম, মমতা বহিরাগত নয়।”
আজ শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীদের নাম না নিয়েই মমতার খোঁচা, এমনি ভোটে জেতার ক্ষমতা নেই। বাপ, ছেলে, জ্যাঠারা ভোট লুঠ করেছে। জ্যাঠার ছেলে টাকা দিয়েছে সেদিন। ধরা পড়েছে।
মমতার প্রশ্ন, এত পেট্রোল পাম্প, ট্রলার কোথা থেকে এল। কো অপারেটিভ টাকা কোথা থেকে এল? অধিকারীদের নাম না নিয়েই মমতার তোপ, “আমি ভালোবাসা দিয়েছিলাম। জানতাম না কেউটে, গোখরো বেরোবে। এত বড় ক্রিমিনাল কান্ড করে জানতাম না। মনে রাখবেন আমারও চোখ আছে। এই জেলায় কি হবে দেখব। কারণ আমার দোষ, আমি বড় বড় গদ্দার, মীরজাফর পুষেছি এখানে। ভাবছে দিল্লির দালালি করে সব পাওয়া যায়।”
একটা সময় জনপ্রিয় স্লোগান ছিল সাবধান সাবধান, আসিতেছে গনি খান, হাতে নিয়ে স্টেনগান। আজ সেটিকেই মমতা গড়েপিটে নিলেন। বললেন, বিজেপির হাতে স্টেনগান, জনগণ সাবধান। বহিরাগতের হাতে স্টেনগান, জনগণ সাবধান।
সভা ভাঙার আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পেশিশক্তি প্রয়োদ না করতে অনুরোধ করলেন মমতা। বললেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সম্মান করে বলছি। তোমরা আমাদের অতিথি। গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দিতে বোলো না। যোগীর ভোট, মোদির ভোট এখান থেকে হয় না। তোমরা নিজেদের কাজ করো। না হলে আমায় মুভমেন্ট করতে হবে।”
Be the first to comment