সাঁতরাগাছি, রবীন্দ্র সরোবর থেকে মুখ ঘুরিয়েছে পরিযায়ীরা, উদ্বেগে পরিবেশকর্মীরা

Spread the love

চিরন্তন ব্যানার্জি,কলকাতা :- ডিসেম্বরের শেষে নতুন বছরের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে শীত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও পরিযায়ী পাখির দেখা নেই সাঁতরাগাছি, রবীন্দ্র সরোবরে। প্রতি বছরের শীতের শুরুতেই সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, চিন প্রভৃতি দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে ভিড় জমাতে শুরু করে ভিনদেশি পরিযায়ীরা। এই সময় রবীন্দ্র সরোবরের বুকে যে সব ছোট ছোট সবুজ ভূখণ্ড রয়েছে সেখানেই তারা ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। কয়েক মাস এখানে কাটিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে আবার স্বদেশে ফিরে যায় পাখির দল। পরিযায়ী পাখিদের দেখতে এই সময়ে বহু মানুষ রবীন্দ্র সরোবরে। কিন্তু এখনও পরিযায়ী পাখিদের দেখা না মেলায় উদ্বেগ পক্ষীপ্রেমীদের। এদিকে সাঁতরাগাছি স্টেশনের পাশেই সুবিশাল সাঁতরাগাছি জলাশয়। শীতের শুরুতে হিমালয়ের পাদদেশ, এমনকী হিমালয় টপকে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসত এখানে। সাঁতরাগাছি ঝিলের আশপাশে বাড়িঘর, বহুতল আবাসনের বর্জ্য ও নিকাশির নোংরা জল, ঝিলের পাশে উপচে পড়া ভ্যাট, বছরের নির্দিষ্ট সময় ঝিল সংস্কারে গাফিলতি, আশপাশের এলাকায় চাষের মাঠ কমে আসা, সব মিলিয়ে এবার শীতে সাঁতরাগাছি ঝিলেও পরিযায়ী পাখি শূন্য। পক্ষী বিশারদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাঁতরাগাছি ঝিলে গাডওয়াল, নর্দার্ন পিনটেল, কমন টিলের মতো ‘ট্রান্স হিমালয়ান’ বহু পাখি আসত। এছাড়া, স্থানীয় পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দেখা মিলত লেসার হুইসলিং ডাক, কমন ইন্ডিয়ান মোরহেনের। পরিবেশকর্মীরা জানিয়েছেন, কলকাতায় শীত পড়ার আগে গত অক্টোবরে পরিযায়ী পাখিদের একটি দল সরোবরে রেকি করতে এসেছিল। সাধারণত এই দলটি ফিরে যাওয়ার পর নভেম্বরের শুরু থেকেই ধাপে ধাপে ভিনদেশি পরিযায়ীরা আসতে শুরু করে। কিন্তু এ বার প্রথম দলটি রেকি করে ফিরে গেলেও তারপর আর কেউ আসেনি। পরিযায়ী শূন্য হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেও এর জন্য কিছুটা দায়ী করছেন। তবে জানুয়ারিতে অনেক পরিযায়ী পাখি আসবে বলে আশা করছেন কেউ কেউ। কিন্তু সার্বিকভাবে শীতের পরিযায়ীরা যে সাঁতরগাছি ঝিলে আগ্রহ হারাচ্ছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও তাদের কারও দেখা না মেলায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত বছরেও চিত্রটা এতটা হতাশাজনক ছিল না। প্রায় ৩৩ বিঘাজুড়ে থাকা জলাশয়ে চরতে দেখা গিয়েছিল হাজারের বেশি লেসার হুইসলিং ডাক বা সরালকে। এগুলি মূলত দেশীয় পরিযায়ী পাখি। এবার তাদেরও দেখা নেই। গোটা ঝিল ঢেকেছে কচুরিপানায়। সরোবরের প্রাতভ্রমণকারী কলকাতা পুরসভার এক প্রাক্তন আধিকারিক বলেন, ‘অক্টোবর মাসে সরবোরে কিছু পরিযায়ী পাখি চোখে পড়েছিল। ভেবেছিলাম, শীত পড়লে হয়তো আরও পাখি ঢুকবে। আমি তো রোজ খোঁজ নিচ্ছি। এখনও কোনও পরিযায়ী পাখি ঢোকেনি। আদৌ আসবে কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ‘ঝিল বাঁচাতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। আশপাশের নিকাশির জল পরিশোধন জরুরি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*