রবিবার সকালেই কংগ্রেস ছেড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের অন্যতম বড় নেতা মিলিন্দ দেওরা। কয়েক ঘণ্টা পরই আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনায়। শিন্ডে এবং তাঁর দলের অন্যান্য পদস্থ নেতাদের উপস্থিতিতে, এদিন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, ‘বর্ষা’য় শিবসেনার শিন্ডে শিবিরে যোগ দিলেন মিলিন্দ দেওরা। দেওরা পরিবারের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ৫৫ বছরের পুরোনো। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের নেতাদের অন্যতম ছিলেন মিলিন্দ। কাজেই তাঁর কংগ্রেস ছেড়ে এনডিএ শিবিরে যোগদান, প্রদেশ কংগ্রেসের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও কংগ্রেস বলেছে, একজন মিলিন্দ দেওরা গেলে, হাজার হাজার মিলিন্দ দেওরা কংগ্রেসে যোগ দেবেন।
জানা গিয়েছে, মুম্বাই দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) দল প্রার্থী দিতে চাওয়াতেই দল ছাড়লেন তিনি। এই আসন থেকে ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে সাংসদ হয়েছিলেন মিলিন্দ দেওরা। কিন্তু, পরের দুইবার অবিভক্ত শিবসেনার অরবিন্দ সাওয়ান্তের কাছে পরাজিত হন। অরবিন্দ সাওয়ান্ত এখন উদ্ধব ঠাকরে শিবিরে আছেন। পরপর দুবার জয়ের ফলে, এই আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছে শিবসেনা (উদ্ধব)। কিন্তু, এই আসন মুম্বইয়ে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। মিলিন্দের বাবা তথা কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা মুরলি দেওরা এই মুম্বই দক্ষিণ আসন থেকে চারবার জয়ী হয়েছিলেন। তাই, এবার এই আসন থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মিলিন্দ। কিন্তু, আসনটি শরিকদের দেওয়া হতে পারে, এই উদ্বেগেই তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিবির বদলে ফেললেন। অথচ, সম্প্রতি তাঁকে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়েছিল।
কংগ্রেস ছাড়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ দেখাননি মিলিন্দ দেওরা। এদিন সকালে কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর, স্ত্রী পূজাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রভাদেবীর সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে পুজো দিতে যান তিনি। সেই সময় পেদার রোডে তাঁর বাসভবন ‘রামলায়ম’-এর সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি উন্নয়নের পথে হাঁটছি”। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “আজ আমার রাজনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। আমি কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। দলের সঙ্গে আমার পরিবারের ৫৫ বছরের সম্পর্ক শেষ হল। বছরের পর বছর ধরে অটুট সমর্থনের জন্য আমি সমস্ত নেতা, সহকর্মী এবং কর্মীদের কাছে তাদের জন্য কৃতজ্ঞ। ”
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ অবশ্য দাবি করেছেন, মিলিন্দ দেওরা আগে থেকেই কংগ্রেস ছেড়ে এনডিএ শিবিরে যোগ দেওয়ার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছিলে। আর তাঁর পদত্যাগের সময় ঠিক করে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনিই ঠিক করে দিয়েছেন, ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরুর ঠিক আগে পদত্যাগ করবেন মিলিন্দ। তাঁর বাবার সবসময় কংগ্রেসের পাশে ছিলেন বলে জানিয়ে, রমেশ বলেন, মিলিন্দ দেওরা শুক্রবার সকালে তাঁকে মেসেজ করে দল ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। জয়রাম রমেশকে তিনি ফোনে জানিয়েছিলেন, জক্ষিণ মুম্বই আসন বর্তমানে শিবসেনার দখলে থাকায়, তারা এই আসনটি দাবি করবে। কেন আসনটি কংগ্রেসের পাওয়া উচিত, তা তিনি রাহুল গান্ধীকে বোঝাতে চেয়েছিলেন। এই বিষয়ে জয়রাম রমেশ গান্ধীর সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু রমেশের মতে, “অবশ্য, এই সবই ছিল প্রহসন। জল ছাড়ার বিষয়ে তিনি মনস্থির করেছিলেন। স্পষ্টতই তাঁর প্রস্থানের কথা ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছেন।”
Be the first to comment