পিয়ালি আচার্য,
আগামীকাল অর্থাৎ ১৫ মার্চ ২০১৯, ২৪ ঘণ্টার চটকল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সিটু। সঙ্গে এআইটিইউসি ছাড়া আর কোনও শ্রমিক সংগঠনকে তারা পায়নি। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে সিটু নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক অনাদি সাহু চটকল শ্রমিকদের প্রতি কুম্ভীরাশ্রু ফেলেন। তিনি বলেন, ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনও পথ খোলা নেই। এই ঘটনার অব্যবহিত পরেই নিউ সেক্রেটারিয়েটে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ও শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী নির্মল মাজি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সঙ্গে ছিলেন আইএনটিটিইউসি সভানেত্রী দোলা সেনও। পাশাপাশি সিটু ও এআইটিইউসি বাদে সব ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত থেকে এই সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
মলয় বাবু বলেন গতকাল অর্থাৎ ১৩ মার্চ রাজ্যের জুটমিলের শ্রমিকদের যে বেতন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা ঐতিহাসিক। তা সত্ত্বেও কয়েকটি বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন ধর্মঘটের ডাক দিলো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গঠনের পর যে বার্তা উনি দিয়েছেন তা হলো ধর্মঘট না করে কলকারখানা খোলা রাখা। সুতরাং এই ধর্মঘট কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। কারন ধর্মঘট করে কারোরই স্বার্থ সুরক্ষিত হয় না। বামফ্রন্ট জমানায় ৩৪ বছর ধরে তারা চটকল কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন। তাঁরা ডিএ পর্যন্ত দিতেন না। কোনোরকম শ্রমিকস্বার্থ রক্ষা করা হতো না। ২০০২ সালে তাদের মজুরী ছিল মাত্র ১০০টাকা। ২০১০ সালে এটি ৫৭ টাকা বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে ১৫৭টি বেড়ে ২৫৮ হয় পরে সেটি আরও বেড়ে ৩৭০ টাকা হয়। এছাড়া মাসে ২৪ দিন হাজিরা থাকলে আরও ১৫টাকা এর সঙ্গে যুক্ত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে মাথায় রেখে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দোলা সেন বলেন, সিপিএম আমলে কখনও দেখিনি ধর্মঘট ছাড়া চুক্তি করতে। কোনোদিন ১ টাকাও শ্রমিকের বেসিক মজুরী বাড়েনি। ডিএ আটকে রাখা হতো। পুরোটাই ছিল আইওয়াশ। কিন্তু আনপড় হলেও শ্রমিকদের বোকা বানানো যায় না। শ্রমিকরা কখনোই জুটমিলে স্ট্রাইক করতে চান না। ২০১৫ সালে প্রতিদিন ১টাকা মজুরী বেড়েছিল অর্থাৎ ২৬ দিনে ২৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সিপিএম তথা সিটু নেতৃত্ব শ্রমিকদের ভিখারি বানিয়ে নিজেদের ইগো স্যাটিসফাই করতে চান। কিন্তু শ্রমিকরা মাথা নোয়াতে রাজি নন। তাঁদের মাইনে দৈনিক ২টাকা অর্থাৎ ২৬ দিনে ৫২টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনে রাখবেন এটা তাদের বেসিক মাইনের সঙ্গে ২টাকা বাড়ছে এবং মাসে ৫২ টাকা বাড়ছে। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে একথা বলা আছে যে, ২৪ দিন কাজ ক্রলেই বেসিকের ৫২ প্লাস ১৩ অর্থাৎ ৬৫ টাকা মাসে বাড়ছে। বেসিক বলা একারনেই কারন আমাদের সরকার পিএফ, ডিএ, বোনাস, ইএসআই, গ্রাচুয়িটি থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে না অর্থাৎ বেসিকের ১২% মাইনে বৃদ্ধি হয়েছে। ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি না হলে অর্থাৎ যদি কোনও দুর্ঘটনা বা ডাক্তার অনুমোদিত অসুখ হয় সেক্ষেত্রে বিবেচনা করে দেখা হবে।
দোলা সেন আরও বলেন, চটকল শ্রমিকদের দেড় হাজার কোটি টাকার বকেয়া সবটাই বাম আমলের। ৩৪ বছরের সব পাপ ৭ বছরে ধুয়ে ফেলা যায় না। বর্তমানে সিটু যে পথে চলেছে তাতে শ্রমিকদের কোনোভাবেই সুরাহা হবে না। তাদের ভাতের থালা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন চুক্তিতে লেখা আছে ২০০২ সালে যেখানে ১০০ টাকা মজুরী ছিল এবং ২০১০ যা ১৫৭ হয় সেটি নবাগতদের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে ২৫৮ টাকা হয়। আর এর থেকেও যারা বেশীদিন কাজ করেছেন তারা যথাক্রমে ৩৫০, ৪৫০ এবং ৫৫০ টাকা পাবেন। এই নবাগতদের ক্ষেত্রে ২৫৮টি পরে বেড়ে ৩৭০ টাকা হয়। তারসঙ্গে ২৪ দিন হাজিরা হলে ১৫ টাকা বেড়ে ৩৮৫ টাকা হয়।
মলয়বাবু এবং দোলা সেন উভয়ই বলেন এরসঙ্গে ৪২% Fringe Benefit যোগ হয়ে ৩৮৫ প্লাস ৪২% মানে ৫৪৬ টাকা হয়। Fringe Benefit ছাড়া কোনও মানুষকে কন্ট্রাক্টে নিয়োগ করা যাবে না। তবে দুজনেই বলেন অনেককিছু করা বাকি আছে। আলোচনা সাপেক্ষে সেগুলি হবে কিন্তু মিল খোলা রেখে তা করতে হবে অর্থাৎ, ধর্মঘট কোনও সমস্যার সমাধান নয়। তাই সকলে ধর্মঘটের বিরোধিতা করুন। সিটুর ডাকে ১৫ মার্চের চটকল ধর্মঘটকে ব্যর্থ করুন।
দেখুন ছবি-
Be the first to comment