স্পিকারের সঙ্গে যোগাযোগই করা হয়নি, রাজ্যপালের অনুমোদনে বিধায়কদের গ্রেফতার অবৈধ

হাইকোর্টের দ্বারস্থ তৃণমূল

Spread the love

নারদ কাণ্ডে গ্রেফতার করা হল রাজ্যের তিন বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনের এই ঘটনায় গোটা বাংলা এখন উত্তাল। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাও পথ অবরোধ করে, কোথাও আবার রাস্তায় শুয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। নিজাম প্যালেসে পৌঁছেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর তিন বিধায়ককে গ্রেফতার করা হলে, গ্রেফতার করতে হবে তাঁকেও, এই দাবি তোলেন তিনি। এসবের মাঝেই প্রশ্ন উঠছে, নারদা কাণ্ডে এইভাবে রাজ্যপালের অনুমোদনে বিধায়কদের গ্রেফতার আদৌ কতটা বৈধ?

এই বিষয়টির ক্ষেত্রে সিবিআই ধাপে ধাপে তদন্ত এগিয়েছেন। যেমন তৎকালীন মন্ত্রিসভার চার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য রাজ্যপালের কাছে অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই। সম্প্রতি রাজ্যপাল নারদ কাণ্ডে চার জন অর্থাৎ ফিরহাদ হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্তে অনুমোদন দেন।

এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে উল্লেখ্য, বিধানসভার নিজস্ব সংবিধানের ৩৫২ ও ৩৫৬ নম্বর ধারায় অধিবেশন থাকলে অধ্যক্ষের অনুমতি প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যেহেতু অধিবেশন ছিল না ফলে রাজ্যপালের ছাড়পত্রই যথেষ্ট।

তৃণমূলের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে এই তিন বিধায়ককে। কিন্তু সিবিআই-এর বক্তব্য, রাজ্যপালের অনুমোদনেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজভবনের তরফে ৯ মে একটি সাংবাদিক বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়েছে সে কথা। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নারদ মামলায় ওই চার জনের গ্রেফতারি চেয়ে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিল সিবিআই। নথিপত্র খতিয়ে দেখে ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ আর্টিকলের ক্ষমতা প্রয়োগ করে সিবিআইকে প্রয়োজনে গ্রেফতারির সম্মতি দেন রাজ্যপাল।

যদিও তৃণমূল দাবি করছে, বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি না নিয়েও গ্রেফতার করা হয়েছে এই তিন বিধায়ককে। রাজ্যপাল যেদিন অনুমতি দিয়েছেন, সেদিনও স্পিকার ছিলেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকে ইতিমধ্যেই লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রতিক্রিয়াতে এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমরা হাইকোর্টকে লিখিত জানিয়েছি, আমাদের কাছ থেকে ওরা কোনও অনুমোদন চায়নি, যোগাযোগও করেনি। রাজ্যপাল যেদিন অনুমোদন দিলেন, সেদিন আমি বিধানসভায় অধ্যক্ষ পদে বহাল ছিলাম। যখন হাইকোর্টের একটা নির্দেশ রয়েছে, সেক্ষেত্রে বিধানসভাকে বাইপাস করে রাজ্যপালকে কীভাবে এটাকে অনুমোদন দিলেন! আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।” এই গ্রেফতারি অবৈধ বলে দাবি করেছেন স্পিকার।

একই দাবি তুলেছেন তৃণমূল নেতা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যপাল বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। এই গ্রেফতারি অসাংবিধানিক।” তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, “মোদী-অমিত শাহর নির্দেশে এসব হচ্ছে। আদালতে মোকাবিলা হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কাজ। নির্বাচনে হেরে যাওয়াতেই এমনটা করল ওরা। সিবিআই একটা খাঁচাবন্দি তোতা।”

এদিকে, নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় আধ ঘণ্টার ওপর বসে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি তুলেছেন, যদি ফিরহাদ-সুব্রত-মদনকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে গ্রেফতার করতে হবে তাঁকেও। সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মমতা। এদিকে, নিজাম প্যালেসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা।

রাজ্যপালের অনুমোদন পাওয়ার পরই তৎপর হয়ে ওঠে সিবিআই। নারদকাণ্ডে চার অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আজই আদালতে চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই। পাশাপাশি, এই চারজনকেও আদালতে পেশ করা হবে। নারদকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত সাসপেন্ডেড আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জার বিরুদ্ধেও আদালতে চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*