রোজদিন ডেস্ক:- বৃহস্পতিবার সংসদের বাইরে আদানি ইস্যুতে অভিনব প্রতিবাদ দেখাল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংসদরা। এদিন সংসদের প্রবেশ দ্বারে ‘মোদী-আদানি এক হ্যায়। আদানি সেফ হ্যায়’! স্লোগান লেখা স্টিকার জ্যাকেটের সাথে সাঁটিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
আদানি ঘুষ-কাণ্ডে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র তদন্ত চেয়ে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ধারাবাহিকভাবে সংসদে বিক্ষোভ চালাছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে আনে নতুন চমক। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, ডিএমকে, উদ্ধবসেনার সাংসদদের পরনে দেখা গেল কালো রঙের জ্যাকেট। তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ঈষৎ মুচড়ে লেখা— ‘মোদী-আদানি এক হ্যায়। আদানি সেফ হ্যায়’! বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জ্যাকেট পরেননি। কিন্তু তাঁর সাদা টি-শার্টে সাঁটা ছিল একই স্লোগান লেখা স্টিকার।
এদিনের বিক্ষোভে শামিল হন বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী, ওয়েনাডের সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী-সহ বিরোধী সদস্যরা। আদানির বিরুদ্ধে ওঠা সব দুর্নীতির তদন্তে যুগ্ম সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠনের দাবিও তাঁরা জানান। প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বে বিরোধীরা তালে তালে ‘জেপিসি, জেপিসি’ স্লোগান দেন। বিরোধী নেতারা ওই জ্যাকেট পরে অধিবেশনকক্ষেও যান। লোকসভার স্পিকার পরে নির্দেশ দেন, রাজনৈতিক স্লোগান লেখা জামাকাপড় পরে সভায় আসা যাবে না।
কংগ্রেসিদের জ্যাকেটের পেছনে এক বৃত্তের মধ্যে মোদি–আদানির এক ছবি সাঁটা ছিল। তার চারদিকে গোলাকারে লেখা, ‘মোদি আদানি এক হ্যায়, আদানি সেফ হ্যায়’। বিক্ষোভ চলাকালে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিছুতেই আদানির বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগের তদন্ত করাবেন না। কারণ, সেই তদন্ত তাঁর নিজের বিরুদ্ধেই করাতে হবে। তিনি ও আদানি এক ও অভিন্ন।’
আদানি সংক্রান্ত কংগ্রেসের প্রচারকে বিজেপি বিদেশি চক্রান্ত বলে জাহির করেছে। লোকসভায় বিজেপি সদস্য নিশিকান্ত দুবে আজ বলেন, ‘এই চক্রান্তের লক্ষ্য ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি রোধ করা। মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরস এই চক্রান্ত চালাচ্ছেন। তাঁকে মদদ দিচ্ছেন রাহুল গান্ধীরা।’
বিজেপির ওই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেস সদস্য গৌরব গগৈয়ের দাবি, ‘আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত কি না, সেটাই তদন্ত করা হোক। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক জেপিসিকে। সেই হট্টগোলের মধ্যে স্পিকার বেলা দুটো পর্যন্ত লোকসভা মুলতবি করে দেন।’
যদিও এদিনের বিক্ষোভে সামিল ছিল না তৃণমূলের সাংসদরা। এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সাংসদ কীর্তি আজাদের মন্তব্য, ‘‘আমাদের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় রয়েছে। সেগুলি আমার সংসদের অধিবেশনে তুলে ধরব।’’
উল্লেখ্য, শীতকালীন অধিবেশনের গোড়া থেকেই আদানিকাণ্ডের তদন্তে জেপিসি গঠনের দাবিতে সরব কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’র শরিকরা। কিন্তু তাতে শরিক হয়নি তৃণমূল। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা বৈঠকে গরহাজির থেকেছেন তৃণমূল সাংসদেরা। বিরোধীদের কক্ষ সমন্বয়েও তাঁরা শামিল হননি। তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বুধবার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “সংসদে বিজেপির কুকীর্তিকে প্রকাশ্যে আনার সার্বিক কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা সবাই একজোট। তবে বিভিন্ন দলের সেই কৌশলকে বাস্তবায়িত করার বিভিন্ন উপায় থাকতেই পারে।” কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের সাংসদ গৌরব গগৈ ধর্নায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে বুধবার তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে সুদীপ জানান, তৃণমূলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয়বঞ্চনা-সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মোট ছ’টি বিষয় নিয়েই তাঁরা সরব হবেন। আদানিকাণ্ড সেই তালিকায় নেই।
প্রসঙ্গত, শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহ লোকসভা ও রাজ্যসভা চলতে পারেনি। আদানি, সম্ভল, মূল্যবৃদ্ধি, মণিপুর কোনো বিষয়েই বিরোধীদের আনা কোনো মুলতবি প্রস্তাব মানা হয়নি। গত মঙ্গলবার থেকে সভা স্বাভাবিক হয় সংবিধান নিয়ে ওঠা বিতর্ক সরকার মেনে নেওয়ায়। এরপর বিরোধীরা বিক্ষোভের চরিত্র বদলে দেন। এদিন কংগ্রেসও আন্দোলনের চরিত্র বদলে দিয়েছে। সংসদের অভ্যন্তরের বিক্ষোভ ও দাবি টিভিতে দেখানো হয় না। তাই সংসদ অচল না রেখে বিরোধীরা সংসদ চত্বরকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Modi Adani Ek Hai 🤝
Adani Safe Hai pic.twitter.com/33pUzOmZSM
— Congress (@INCIndia) December 5, 2024
Be the first to comment