সেমিফাইনাল বলে কথা! খেলা একদম অ্যাটাক আর কাউন্টার অ্যাটাকে টানটান। যেমন বিজেপি, তেমন কংগ্রেস। শুক্রবার ছত্তীসগড়ের ভোট প্রচারে গিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাম না করে রাহুল গান্ধীর দাদু, ঠাকুমাকে টেনে এনেছিলেন। সেই সঙ্গে দলের সভাপতি করা নিয়ে পরিবারতন্ত্রের তীক্ষ্ণ তিরে বিঁধেছিলেন কংগ্রেসকে। শনিবার একদিনের মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন মোদী। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসের তরফে দুই নেতা কপিল সিব্বল এবং পি চিদম্বরম, দুই ইস্যুতে মোদীকে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। রবিবার মালদ্বীপ থেকে ফিরে এসে ফের সেই ছত্তীসগড়ের নির্বাচনী প্রচার থেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা তোপ দাগলেন মোদী।
আগের দিন মোদী অভিযোগ তুলেছিলেন কংগ্রেসে গণতন্ত্র নেই। ওই দলে শুধুই পরিবারতন্ত্র। স্বাধীনতার পর নেহেরু বা গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কখনও দলের সভাপতিই হননি। পাল্টা শনিবার চিদম্বরম বিরাট তালিকা নিয়ে ময়দানে নেমেছিলেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী লেখেন, “১৯৪৭ সালের পর থেকে আচার্য কৃপালানি, পট্টবি সীতারামাইয়া, পুরুষোত্তমদাস ট্যান্ডন, জগজীবন রাম, শঙ্কর দয়াল শর্মার মতো নেতারা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।” রবিবার মহাসামুন্দের জনসভা থেকে মোদী বলেন, “আমি প্রশ্ন তুললাম আর ওই পরিবারের রাজ পেয়াদারা জবাব দিতে নেমে পড়লেন। কিন্তু আমি তো বলেছিলাম পাঁচ বছর ওই পরিবারের বাইরে কেউ সভাপতির দায়িত্ব সামলেছে দেখান। দলিত সীতারাম কেশরীকে সভাপতি করেছিল কংগ্রেস। মনে নেই তারপর কী ভাবে তাঁকে সরানো হয়েছিল? বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছিল? তারপর ফুটপাথে তাঁকে ছুড়ে ফেলে সনিয়া গান্ধী ওই চেয়ারে বসেছিলেন।”
শুক্রবারের জনসভা থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর নাম না করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জলের পাইপ লাইন কি তোমার দাদু-দিদা বা নানা-নানি পেতেছিলেন? পাল্টা আক্রমণে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের দুঁদে আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল লিখেছিলেন, “স্টেশনে চা বেচতেন শুনেছি। জল কোথা থেকে পেতেন শুনি!” সঙ্গে রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ এ-ও লেখেন, “জওহরলাল নেহরু আধুনিক ভারতের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে ভারতকে গড়ে তোলার নেপথ্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু আপনাদের দাদু-দিদা বা নানা-নানি তো ব্রিটিশের খোচর ছিলেন।” রবিবার মহসামুন্দ থেকে মোদী বলেন, “এক রাজপেয়াদা বলেছেন, নেহেরুজির জন্যই নাকি চা ওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। এরা যে কোথা থেকে এসব বের করে কে জানে (হেসে)! আসলে ওদের পরিবারের কপালে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি লেখা হয়ে গিয়েছিল। তাই কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না যে, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি।”
এ দিনের জনসভায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মোদী। জানান, তিনি যখন সঙ্ঘের প্রচারক হিসেবে কাজ করতেন, তখন বেশ কয়েকবছর এই মহাসামুন্দে এসে কাজ করেছিলেন। সঙ্গে এ-ও বলেন, সেই সময় থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তিনি জানেন এখানকার মানুষের সমস্যা কী। প্রসঙ্গত, ছত্তীসগড়ের প্রথম দফার নির্বাচনের আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী একটি জনসভায় বলেছিলেন, “এ রাজ্যের মানুষ আমার পরিবারকে জানেন। ইন্দিরা গান্ধীকে চেনেন। এখানকার মানুষের সঙ্গে আমার পরিবারের অনেক পুরনো পরিচয়।” পর্যবেক্ষকদের মতে, এ দিন মোদীও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি অনেক কম বয়স থেকে এই জনপদকে হাতের তালুর মতো চেনেন।
Be the first to comment