কৃষকদের আর্থিক সাহায্য করতে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনার অষ্টম দফায় দেশের কৃষকদের দুই হাজার টাকা করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার সকাল ১১টায় তিনি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অর্থ বন্টন শুরু করেন। এই দফার বিশেষ গুরুত্ব হল নানা টাল-বাহানার পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরাও পিএম কিসান যোজনার টাকা পাবেন।
দেশের কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ও কৃষিকাজে সহায়তার লক্ষ্যেই বছরে তিন কিস্তিতে মোট ছয় হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি চার মাস অন্তর দুই হাজার টাকা দেশের ৯.৫ কোটি কৃষককে দেওয়া হয়। এই দফায় প্রধানমন্ত্রী মোট ১৯ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠাবেন। এখনও অবধি মোট ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন দেশের কৃষকরা।
আজকের এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার। গতকাল তিনি টুইট করে জানান, “আগামী ১৪ মে সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজী পিএম কিসান যোজনার অন্তর্গত অষ্টম দফার আর্থিক সহায়তা দেশের ৯.৫ কোটি কৃষকদের দেবেন। মোট ১৯ হাজার কোটি টাকার অনুদান সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেবেন।”
কেবল আর্থিক সহায়তাই নয়, কৃষক পরিবারদের কীভাবে সাহায্য হয়েছে এই অর্থের মাধ্যমে এবং তাঁদের বিভিন্ন চাহিদা-সমস্যার কথাও শোনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনার কঠিন সময়েও কৃষকরা উৎপাদনের রেকর্ড তৈরি করেছে। নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এমএসপি মূল্যের ক্রয়েও। ধান ও গমে রেকর্ড ক্রয় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ” এ বছর এখনও পর্যন্ত এমএসপি-তে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি গম কেনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৮,০০০ কোটি টাকা গম ক্রয় হয়েছে, এই টাকা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে”। কৃষিকাজে নতুন উদ্ভাবনী শক্তি ও চাষের নতুন নতুন পদ্ধতির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অষ্টম দফায় প্রথমবার বাংলার কৃষকরাও প্রধানমন্ত্রী কিসান যোজনার সুবিধা পাবেন। এতদিন কেন্দ্রের অভিযোগ ছিল, সমস্ত রাজ্য এই সুবিধা পেলেও রাজনীতির কারণে বাংলার কৃষকরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন কেন্দ্র রাজ্য সরকারের কাছে টাকা পাঠালে তা সরাসরি কৃষকদের কাছেই পৌঁছে যাবে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, তৃতীয়বার রাজ্যের গদিতে বসার পরই এই কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পে কেন্দ্রের প্রস্তাবে রাজি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, ভোট প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতারা কৃষকদের ১৮ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন কেবল এক কিস্তির টাকা দেওয়া হবে বলেই জানানো হয়েছে।
যদিও কেন্দ্রের তরফে পাল্টা জবাব দিয়ে জানানো হয়েছে, কৃষকদের নাম নথিভুক্ত ও তথ্য যাচাই করে পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্যের। সঠিক সময়ে রাজ্য নথি না পাঠানোয় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কেন্দ্রের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, বাকি রাজ্যের কৃষকদের জন্য কিসান যোজনার অষ্টম দফা হলেও পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য এটি প্রথম দফা। কেন্দ্রের বরাদ্দ দুই হাজার টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাবে। কারা এই যোজনার সুবিধা পাবে, তাঁদের নামের তালিকা ও তথ্য যাচাই রাজ্য সরকারকেই করতে হবে।
Be the first to comment