অতীত! শব্দটা শুনলেই যেন সকলের চোখের সামনে ভেসে আসে কিছু ভয়াবহ ফ্ল্যাশব্যাক। ছোটোবেলার ফোবিয়া গুলো সময়ের সাথে সাথে হালকা হয়ে গেলেও কাটে না ভয়! সামাজিক জীবনের ঘোড়দৌড়ে মানুষ যতটা এগিয়ে, মানসিক জটিলতার ঘেরাটোপে ঠিক ততটাই আতঙ্কিত। আর এসবের থেকে মুক্তি পেতেই হাতে একটু সময় নিয়ে কাছাকাছি কোনও মনোরম পরিবেশ থেকে আমরা ঘুরে আসতে বলা ভালো পালিয়ে যেতে চাই। তবে মন ভালো করতে গিয়ে যদি সম্মুখীন হতে হয় আরও মারাত্মক ভবিতব্যের তাহলে?
জনপ্রিয় ভ্রমণ পর্যটনকেন্দ্র পুরী। বাঙালির প্রিয় ডেস্টিনেশনের একাধিক রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরেই অঞ্জন দত্ত সাজিয়েছেন গল্পের প্লট। বিখ্যাত লেখিকা অর্পিতা সেন অর্থাৎ অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের শৈশবের মর্মান্তিক ঘটনাই উঠে এসেছে সিরিজের বেশিরভাগ অংশে। ‘বাইপোলার ডিজরডার’ রোগটি কিভাবে একটি মানুষের জীবনকে তছনছ করে দেয় তার নিদর্শন পেয়েছি আমরা এই ছবি। একইসঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে ঘিরে কিভাবে কিছু প্রকার মানুষ ক্রমাগত আক্রমণ করে যায়, তাও আমরা দেখতে পেয়েছি। সিরিজের পুরো আটটি পার্টই তোলপাড় উত্তেজনাপূর্ণ।
রহস্যজনক মৃত্যু, সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম, লোভ, হিংসা, ভাইবোনের সরল সম্পর্ক এবং সামাজিক অবৈধতা, এইসব কিছু মিলেই মার্ডার বাই দ্য সি। তবে অন্যান্য থ্রিলিং ছবি গুলির থেকে এই ছবি ভিন্ন, কারণ প্রতিটি দৃশ্যে যখন গল্পের সখের ডিটেকটিভ অর্পিতার সাথে দর্শকরাও- ‘খুনী কে?’ সেটা জানার চেষ্টা করছিলেন তখন পুরোটাই আনপ্রেডিক্টেবল ছিল। অপরাধমূলক কেসে সন্দেহ বহির্ভূত বলে কেউই থাকেন না। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রতিপত্তিশীল বিক্রম রয়ের খুনের রহস্য ভেদ করার জন্যই মাঠে নামেন লিখিকা অর্পিতা সেন। ব্যাবসায়ীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে শুরু করে তাঁর নিজের বঞ্চিত সন্তান, প্রত্যেকেই ছিল সন্দেহের তালিকায়। তবে সিরিজের শেষ অংশে ঘুরে যায় গল্পের পাশা। এমন অদ্ভুত ক্লাইম্যাক্স আশা করেননি দর্শকেরা। তাই হয়তো চমক লেগেছে দর্শকদের।
পায়েল সরকার, সুজয়নীল মুখোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, অর্জুন চক্রবর্তী, সুপ্রভাত দাস, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত এবং তৃণা সাহা সহ সুমন্ত মুখার্জী এবং অলিভিয়া সরকারকেও আমরা একটি বিশেষ ভূমিকায় পেয়েছি। অভিভাবকের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং তাদের ঝঞ্ঝাটময় সম্পর্ক কিভাবে সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে সেটা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন অর্জুন চক্রবর্তীর চরিত্র। প্রখ্যাত গায়ক রুপঙ্কর বাগচীকেও আমরা বেশ কিছু বছর পর আবারও এক গভীর ভূমিকায় পেয়েছি এই সিরিজে। বাংলা সিনেমা ওয়েব সিরিজ জগতে সুপ্রভাত দাসের চরিত্র বিশ্লেষণ এবং তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন চিহ্ন আছে বলে তো মনে হয় না। তবে সিরিজে পায়েল সরকারের চরিত্র তাঁর বাকি ছবির তুলনায় বেশ ভিন্ন স্বাদের।
১২ ই আগস্ট ২০২২ এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই হইচই ওয়েব সিরিজটি অনেক দর্শকের মন জয় করেছে। ‘মার্ডার বাই দ্য হিল’ দর্শকদের হতাশ করলেও সমুদ্র অতটা হতাশ করেনি। তবে সমালোচকদের মতামত মাত্র আটটি এপিসোডের মধ্য দিয়ে পুরো সিরিজটি শেষ করার জন্যেই পরিচালক অঞ্জন দত্ত শেষের দিকে একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছেন। অভিনয়, স্ক্রিনপ্লে, কাহিনী, পরিচালনা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সব মিলিয়ে পাঁচে/চার দেওয়া যেতেই পারে গোটা সিরিজটিকে। থ্রিলার গল্পের সঙ্গে সাইকোলজিক্যাল ইকুয়েশনের টুইস্ট উপভোগ করতে শীঘ্রই দেখে ফেলুন ‘মার্ডার বাই দ্য সি’!
Be the first to comment