সিবিআই অফিসের বাইরে সমর্থকদের নিয়ে ধরনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি দু-তিন হাজার সমর্থক নিয়ে আদালতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। এই যুক্তি দেখিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ফিরহাদদের অন্তর্বর্তী জামিন-রায়ে স্থগিতাদেশের আর্জি করে সিবিআই। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার রাতে নিজাম প্যালেসের পিছনের দরজা দিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয় ফিরহাদ, মদন, শোভন, সুব্রতদের।
হাইকোর্টে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, অভিযুক্তদের গ্রেফতারির পরেই সিবিআই অফিসে বাইরে জড়ো হতে থাকেন জনতা। সকাল ১০.৫০ মিনিটে সমর্থকদের নিয়ে ধরনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শর্তহীন মুক্তির দাবি করেন তিনি। যে আদালতে ধৃতদের পেশ করা হওয়া কথা ছিল, তার বাইরে দু-তিন হাজার সমর্থক নিয়ে হাজির হন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। গোটা দিন সেখানেই ছিলেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনে হতেই পারে, আইনের শাসন নেই। বরং ভিড় প্রভাবিত করেছে। মামলা ভিন রাজ্যে স্থানান্তরের আর্জিও করে সিবিআই।
সিবিআইয়ের প্রভাব খাটানোর যুক্তি মেনে নিয়েছে হাইকোর্ট। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বিতর্কের দোষগুণ বিচার করছে না আদালত। তবে যেভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষকে আইনের শাসনে ভরসা রাখতে উৎসাহিত করবে না। তার পরই নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে আগামী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী। তিনি বলেন,”জামিনের প্রতিলিপি এসেছে রাত ৮টায়। তাও ছাড়েনি। বলেছে, ১৫ মিনিট দাঁড়ান। আমরা দেখছি। হাইকোর্টে আমাদের আইনজীবী যাননি। কীভাবে জামিনে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল? আর মুখ্যমন্ত্রী তো ধরনা দেননি।”
রাতে প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পথে সংবাদ মাধ্যমকে ফিরহাদ হাকিম বলেন,”বিচার ব্যবস্থায় আস্থা আছে। আইনের মধ্যে দিয়ে মুক্তি পাব। সিবিআই, ইডি কিনে নিতে পারে বিজেপি। তবে বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাব। জনপ্রিয় হওয়া অন্যায় নয়। আমি জনপ্রিয় তাই হাজার হাজার লোক এসেছে। আমার কি দোষ? আমি সিবিআইকে সহযোগিতা করিনি? আমার জামিনের অধিকার কেন লঙ্ঘিত হল?”
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে নারদা ঘুষকাণ্ডে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের আবেদন করেছিল সিবিআই। সেই আর্জি খারিজ করে সন্ধেয় তাঁদের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। কিন্তু অভিযুক্তদের রেহাই করেনি সিবিআই। নিজাম প্যালেসে অভিযুক্তদের রেখে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বেঞ্চে নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রাতেই শুরু হয় ভার্চুয়াল শুনানি।
Be the first to comment