রোজদিন ডেস্ক,কলকাতা :- বছর শেষের আগেই তারাদের দেশে খ্যাতনামা পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন ‘অঙ্কুর’, ‘নিশান্ত’-এর ছবির পরিচালক। মুম্বইয়ের ওকহার্ট হাসপাতাল থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিট নাগাদ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে পিয়া বেনেগাল। এক সপ্তাহ আগেই তিনি ৯০ বছর পূর্ণ করেছিলেন। এই পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণে ভূষিত এই পরিচালকের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এ দিন উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা কুলভূষণ খরবন্দা, নাসিরুদ্দিন শাহ, দিব্যা দত্ত, শাবানা আজ়মি, রজিত কপূর, অতুল তিওয়ারি। ছিলেন শশী কপূরের পুত্র কুণাল কপূরও।
সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে উদয় হয় এই নক্ষত্রের। প্রথম ছবিতেই ফিল্মবোদ্ধাদের চমকে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও পেশাদার জগতে তিনি প্রবেশ করে এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজের সুবাদে। ১৯৩৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর হায়দরাবাদের কোঙ্কণী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম শ্যাম বেনেগালের। বাবা ছিলেন আলোকচিত্রশিল্পী, ছোট থেকেই তাই সংবাদমাধ্যম টানত শ্যাম বেনেগালকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রথম ছবিটি বানিয়েছিলেন শ্যাম। বাবা শ্রীধর বি বেনেগালের উপহার দেওয়া ক্যামেরায় তৈরি হয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি। প্রথাগত শিক্ষার ধারায় তিনি হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তাঁর হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হায়দরাবাদ ফিল্ম সোসাইটি।
১৯৫৯ সালে এক অ্যাড এজেন্সিতে কপিরাইটার হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি সেই সংস্থার ক্রিয়েটিভ হেড পদে ছিলেন। এরপর ১৯৬২ সালে তৈরি করেন প্রথম তথ্যচিত্র, যা ছিল গুজরাতি ভাষায় তৈর ‘ঘের ব্যায়টা গঙ্গা’।
হিন্দি সিনেমার জগতে অন্য ধারার ছবি তৈরিতে জোয়ার এনেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ছবি অঙ্কুর। তিনি তাঁর ছবিতে অভিনয় জগতের সঙ্গে পরিচয় করান শাবানা আজমি, অনন্ত নাগের মতো অভিনেতাদের। বিনোদন নয়, তাঁর চলচ্চিত্রগুলিতে সমাজের কঠিন বাস্তবতা চিহ্নিত হয়েছিল। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় সমান্তরাল চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যত প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। ‘অঙ্কুর’-এরপর নিশান্ত (১৯৭৫), মন্থন (১৯৭৬),
ভূমিকা: দ্য রোল (১৯৭৭), জুনুন (১৯৭৮), আরোহন (১৯৮২), নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু: দ্য ফরগটেন হিরো (২০০৪), এবং ওয়েল ডান আব্বা (২০১০) সহ একাধিক চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন। ২০০১ সালে মুক্তি প্রাপ্ত জুবেদা ছবিটি বক্স অফিসের সঙ্গে সঙ্গে সমালোচকদের মন জয় করেছিল।
তিনিই সেই সময় এফটিআইআই পুণে ও দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার বিভিন্ন সেই সময়ে অনামি, অপরিচিত অথচ প্রতিভাধর অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করেছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরি, স্মিতা পাটিল, শাবানা আজমি, কুলভূষণ খারবান্দি ও অমরিশ পুরীরা। এর বাইরেও তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত তিনি ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করেন।
পুরস্কারের ঝুলিও তাঁর সব সময় ভরাই থেকেছে। ১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন শ্যাম বেনেগল। ১৯৯১ সালে তাঁকে দেওয়া হয় পদ্ম ভূষণও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ২০১৬ সালে আইটিএম ইউনিভার্সিটি গোয়ালিয়র থেকেও পেয়েছিলেন ডিলিট উপাধি। সব মিলিয়ে দীর্ঘ কর্মজীবনের নানা পর্যায়ে তিনি ছুঁয়েছেন শিল্পের শ্রেষ্ঠ বিভিন্ন পর্যায়গুলিকে।
৯০ বছর বয়সে পা দিলেও তিনি নিজের কাজ নিয়ে সদা ব্যস্ত থাকতেন। গত বছরই ‘মুজিব: দ্যা মেকিং অফ নেশন’ নামক একটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি যে সিনেমায় ভারত এবং বাংলাদেশের একাধিক নামিদামি অভিনেতারা অভিনয় করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের অভিনেতা আরিফিন শুভকে। শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নুসরত ফারিয়া। ‘মুজিব’ ছবির মুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্কের ঝড় বয়েছিল।
জানা গিয়েছে, সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করার জন্য হাসপাতালে যেতে হত পরিচালককে। একাধিক শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি যেভাবে নিজের জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন তা সত্যি প্রশংসার যোগ্য। জন্মদিন পালনের ঠিক ন’দিনের মাথায় শ্যাম বেনেগলের মতো পরিচালকের চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সিনেপ্রেমীরা। শ্যাম বেনেগলের মৃত্যু এক যুগের অবসান।
Be the first to comment