জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর
গত কয়েকদিন ধরে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের কথা আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস । সেই পূর্বাভাষ সত্যি প্রমানিত করে টানা বৃষ্টিপাত চলছে উত্তরবঙ্গে । ফলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শনিবার থেকে দক্ষিন দিনাজপুর জেলা জুড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। রাতভর চলেছে দফায় দফায় বৃষ্টিপাত। রবিবার সকাল ও ভোর রাত থেকে প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তায় রাস্তায় জল জমে গেছে, এমনকি প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের ফলে বাড়ির ভিতরে জল ঢুকতে শুরু করে দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের এক কথায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে সেই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কথা উসকে দিচ্ছে তা বলায় বাহুল্য
এক প্রকারের বন্যার আকার নিয়েছে আর সে কারণে আশঙ্কায় রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বাসিসহ গঙ্গারামপুরের বাসিন্দারা। কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে পথচারীদের । তাই পারতপক্ষে কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না । ব্যাহত যান চলাচল।
অন্যদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিশেষ তিনটি নদী আত্রেয়ী, পূর্ণভবা ও টাঙ্গন নদীর জল প্রায় বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। গঙ্গারামপুর শহরের নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সচেতন ও সতর্কভাবে থাকতে বলা হয়েছে গঙ্গারামপুর পৌরসভার তরফে। যেকোনো রকম বিপদে পাশে রয়েছে গঙ্গারামপুর পৌরসভা বলে আশ্বস্থ্য করা হয়েছে এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টও তৈরি রয়েছে বলে জানান গঙ্গারামপুর পৌরসভার পৌরপিতা প্রশান্ত মিত্র। ইতিমধ্যে গঙ্গারামপুর পৌরসভার ১৮ টি ওয়ার্ডের একাধিক ওয়ার্ড জলমগ্ন, আর এই পরিস্থিতিতে গঙ্গারামপুর পৌরসভার পৌরপিতা প্রশান্ত মিত্র পৌরসভার একাধিক জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলি সরজমিনে খতিয়ে দেখতে ও বন্যার পরিস্থিতি দেখতে পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। রবিবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে যাত্রীবাহী বাসগুলি । যাত্রী কম থাকায় টোটো অটো ও বাস মালিকরা প্রমাদ গুনছেন । পাশাপাশি এদিন বিভিন্ন দোকান দোকানপাটও বন্ধ ছিল । সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। কারন বাস কম, তাই বাসের জন্য হাপিত্যেশ করে তাদের বসে থাকতে হচ্ছে । যে দু’একটা বাস চলছে তা ভিড়ে ঠাসা।
গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা নারায়ন সরকার বলেন,’গত কয়দিন ধরে টানা ও লাগাতার নিম্নচাপ ভারি মাঝারি বৃষ্টি শুরু হওয়াতে গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে ঠিকই। কিন্তু টানা ভয়াবহ ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাতের ফলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে খুব চিন্তায় রয়েছে আমরা, ফের ২০১৭ সালের কথা মনে পড়ছে জানিনা কি হবে ভগবান কে ডাকছি”।
এদিকে জমিতে জল জমে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে গেছেন দক্ষিন দিনাজপুর জেলার কৃষকরা । যারা শাকশব্জির চাষ করেছে তারা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ব্যস্ততম শহর বলে পরিচিত গঙ্গারামপুরে রবিবার সকালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র । বন্ধ দোকানপাট । সুনসান রাস্তাঘাট। আর মাঝে মাঝেই নামছে ঝেঁপে বৃষ্টি ।গঙ্গারামপুর পুরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর এলাকায় ড্রেনগুলি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় ঠিকমত জল নিকাশ হচ্ছে না । ড্রেনের নোংরা জল রাস্তায় উঠে আসছে, প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের ফলে বাড়িতে জল ঢুকতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে বাড়িতে জল জমে যাচ্ছে, এছাড়াও ২০১৭ সালের সেই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির চিত্র সামনে ফুটে উঠছে যে কারণে আশঙ্কায় রয়েছে পৌর বাসিন্দারা বলে এক প্রকার অভিযোগ জানান তারা। বাড়ছে মশা,মাছির উপদ্রব। পাশাপাশি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া গ্রামের রাস্তা গুলো বেহাল হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গ্রামীন এলাকার বাসিন্দারাও।
তবে, রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্ত্বেও ও জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও সুরাপ্রেমীদের উপর কোনো প্রভাব পড়েনি । বরঞ্চ ঠান্ডা আবহাওয়া তাঁরা মজেছেন সুরার নেশায় । এদিন সকাল থেকেই গঙ্গারামপুর শহরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত সুরার দোকান গুলিতে চোখে পড়ার মত ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সর্বশেষে বলায় বাহুল্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে ভয়াবহ বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার ফলে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের। ফের ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির চিত্র ফুটে উঠছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। তবে প্রশাসনিকস্তর থেকে শুরু করে জেলা জুড়ে পৌরসভাগুলি ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট যেকোনো বিপদ ও মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
Be the first to comment