মহাকুম্ভের প্রথম দিনেই পুণ্যস্নান সারলেন দেড় কোটির বেশি পুণ্যার্থী, ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা :- ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু মহাকুম্ভ। আগামী ৪৫ দিন ধরে চলবে ঐতিহাসিক এই মেলা। সোমবার মহাকুম্ভ পূর্ণিমার দিন গঙ্গা, সরস্বতী ও যমুনার ‘ত্রিবেণী সঙ্গম’-এর জলে পূণ্য স্নান সেড়ে বিশেষ এই মেলার সূচনা করলেন দেশ-বিদেশ থেকে আগত লক্ষ লক্ষ ভক্ত। ধূপের গন্ধ ও ফুলের সাজে সেজে উঠেছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ। আর মহাকুম্ভ উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটগুলিতে আছড়ে পড়েছে জনসুনামি। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমদিনই বিকাল ৪টে পর্যন্ত পুণ্যস্নান সেরেছেন প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ পুণ্যার্থী। বিশেষ এই দিনে ভক্তদের উদ্দেশ্য বিশেষ বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিন এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লেখেন, “ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোটি কোটি মানুষের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও সংস্কৃতির পবিত্র মেলবন্ধন হল মহাকুম্ভ। আজ থেকে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হল ঐতিহাসিক এই মেলা।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “প্রয়াগরাজে ভক্তদের ভিড় দেখে আমি আপ্লুত। ত্রিবেণী সঙ্গমের জলে স্নান করতে ভিড় জমিয়েছেন তাঁরা। সকলকে শুভেচ্ছা।”
প্রতি ১২ বছর অন্তর আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ। এই মেলাকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিভিন্ন রহস্য ও পৌরাণিক গল্পকথা। ঐতিহাসিক এই মেলাকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের মানুষের মনে তাই ভক্তির আলাদাই প্রভাব রয়েছে। এবছর এই স্নান বিশেষ মাত্রায় পৌঁচেছে। কারণ গ্রহদের রাজা সূর্যদেব ধনু রাশি ছেড়ে সংক্রান্তির মকর রাশিতে গমন করেন। এবারে ১৪৪ বছর বাদে বিশেষ যোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, এই বছর প্রায় ৪৫ কোটি ভক্তের সমাগম হতে চলেছে মহাকুম্ভের মেলায়। গত শনিবার থেকেই পূণ্য স্নান শুরু করে দিয়েছেন ভক্তরা।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, পূর্ণিমা তিথি শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৩ মিনিট থেকে। চলবে ১৪ জানুয়ারি ৩টে ৫৬ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে রবি যোগ। চলবে ১০টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত, সকাল ৫টা ২৭ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে ব্রহ্ম মুহূর্ত। তিথি চলবে সকাল ৬টা ২১ মিনিট পর্যন্ত। বেলা ১২টা ৯ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে অভিজিৎ তিথি। তিথি চলবে ১২টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত, বিজয় মুহূর্ত শুরু হবে দুপুর ২টো ১৫ মিনিট থেকে। শেষ হবে দুপুর ২টো ৫৭ মিনিটে, গোধূলি মুহূর্ত শুরু হবে বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে আর চলবে সন্ধ্যা ৬টা ৯ মিনিট পর্যন্ত, সায়াহ্ন সন্ধ্যার তিথি শুরু হবে সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে, তিথি শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে। প্রাত সন্ধ্যার তিথি শুরু হবে সন্ধ্যা ৫টা ৫৪ মিনিটে। তিথি শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে। নিশীথ মুহূর্ত শুরু হবে রাত আজ ১২টা ৩ মিনিট থেকে। চলবে ১২টা ৫৭মিনিট পর্যন্ত।
জনস্রোতে অনেকেই পরিজন বা সঙ্গীছাড়া হয়ে পড়েছেন। মেলা পরিচালন সমিতির বিশেষ উদ্যোগে সঙ্গীছাড়া হওয়া ২৫০ জনকে পরিবার বা দলের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রধান প্রশান্ত কুমার জানান, “মহাকুম্ভের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজের দফতর থেকে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ রাখছেন ক্রমাগত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১০২টি চেক পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে শহর ও মেলা চত্বর জুড়ে।” প্রশাসন সূত্র খবর, প্রায় ৪০,০০০ পুলিশ কর্মী সদা সতর্ক রয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও দমকল এবং আধা সামরিক বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তীক্ষ্ণ নজরদারিতে পাঁচটি বজ্র, ১০টি ড্রোন এবং চারটি অ্যান্টি সাবোটাজ দল টহলদারি চালিয়ে যাচ্ছে। নজরদারি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জলের নীচে ড্রোন নামানো হয়েছে। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় ছবি অ্যানালাইজ করা হচ্ছে প্রতি মুহূর্তের। ২,৭০০টি এআই ক্যামেরা কুম্ভমেলা জুড়ে লাগানো হয়েছে। জলের নীচে তদারকিতে কাজ করছে ১১৩টি ড্রোন।
পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জয়বীর সিং জানিয়েছেন, পর্যটক এবং ভক্তরা প্রয়াগরাজের ল্যান্ডস্কেপের উপরে উঠে বিশাল মহাকুম্ভ এলাকার একটি অতুলনীয় দৃশ্য দেখতে পাবেন। ভাড়া কমানোর উদ্দেশ্য একটাই, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এই মহাযজ্ঞের আনন্দ চাক্ষুষ করার সুযোগ নিতে পারেন।
জানা যাচ্ছে, জয়রাইডের জন্য আগাম অনলাইন বুকিং করা যাবে। www.upstdc.co.in-এ বুক করা যা‍বে। ভারত সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান ‘পবন হংস’ এই জয়রাইড পরিচালনা কর‍বে। আবহাওয়ার অবস্থা এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে, হেলিকপ্টার জয়রাইড একটানা পরিষে‍বা দিয়ে যা‍বে। এছাড়াও থাকছে ২৪ থেকে ২৬ জানুযারি ড্রোন শো, ওয়াটার লেজার শো এ‍বং অন্যান্য নানা ধরণের অনুষ্ঠান। ‍বিখ্যাত শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নে‍বেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*