কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার বৈঠকে পাশ হয়ে গেল ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি, শীতকালীন অধিবেশনেই আসবে বিল

Spread the love

রোজদিন ডেক্সঃ ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি কার্যকরের পথে আরেক ধাপ এগোল মোদী সরকার। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার বৈঠকে পাশ হয়ে গেল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ। এর ফলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে কেন্দ্র বিল পাশে সক্রিয় হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটের আগে মার্চ মাসে রামনাথ কোবিন্দ সুপারিশ জমা দিয়েছিল। এর ফলে রাজ্য বিধানসভা ও লোকসভা ভোট একসঙ্গে হবে এবং নির্বাচন সংক্রান্ত কোষাগার থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ বেঁচে যাবে। সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শীত অধিবেশনেই এ নিয়ে বিল আনতে পারে সরকারপক্ষ।

এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, এক দেশ, অভিন্ন ভোট দুদফায় কার্যকর হবে। তাঁর দাবি, এই প্রস্তাবে অধিকাংশ দল সমর্থন দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই কাজে একটি অভিন্ন ভোটার তালিকা তৈরি হবে। কোবিন্দ প্যানেলের সুপারিশ কার্যকর করতে একটি কমিটি গঠন করবে কেন্দ্র।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মোদী সরকার এই অভিন্ন ভোট করার বিষয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছিল। যা বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি ছিল। কোবিন্দ প্যানেল গত মার্চে ১৮,৬২৬ পাতার একটি রিপোর্ট জমা দেয় এ ব্যাপারে। প্রথম পদক্ষেপেই সব বিধানসভা এবং লোকসভা একসঙ্গে করার ব্যাপারে সুপারিশ করে প্যানেল। এর জন্য সংবিধান সংশোধনে রাজ্যগুলির অনুমোদন প্রয়োজন হবে না।

এর পরবর্তী পদক্ষেপে লোকসভা ও বিধানসভাগুলির ভোটের সঙ্গে পুরসভা-পঞ্চায়েত ভোটও মিলিয়ে দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে এক দেশ, অভিন্ন ভোট বাস্তবে রূপায়ণ করতে অন্তত ১৮টি সংবিধান সংশোধনী আনতে হবে বলে সুপারিশ করেছে কোবিন্দ প্যানেল। গত স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই নীতির সপক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা সময়ের দাবি। বারবার নির্বাচন দেশের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সেই দাবিকে দ্বিগুণ করে বলেন, তৃতীয় মোদী সরকারের জমানাতেই এক দেশ অভিন্ন ভোট দেশে কার্যকর করা হবে।

অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বুধবার মোদী মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এক দেশ এক ভোট আসলে বিজেপির আর একটি গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপ।’’ কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ। বিশেষত বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির আশঙ্কা, ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে লোকসভার ‘ঢেউয়ে’ বিধানসভাগুলি ‘ভেসে যাবে’।

ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ সংক্রান্ত মামলায় ধাপে ধাপে উপত্যকার পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভার ভোটের আয়োজনের কথা বলেছে মোদী সরকার। তা ছাড়া, ‘এক ভোট’ ব্যবস্থা চালুর পরে কেন্দ্রে বা কোনও রাজ্যে পাঁচ বছরের আগেই নির্বাচিত সরকার পড়ে গেলে কী হবে, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। যদিও লোকসভা ভোটের সঙ্গেই সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট সেরে ফেলার পক্ষে মোদী সরকারের যুক্তি হল, এতে নির্বাচনের খরচ কমবে। একটি ভোটার তালিকাতেই দু’টি নির্বাচন হওয়ায় সরকারি কর্মীদের তালিকা তৈরির কাজের চাপ কমবে। ভোটের আদর্শ আচরণ বিধির জন্য বার বার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ থমকে থাকবে না। নীতি আয়োগ, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশনও এই ভাবনাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে বলে কেন্দ্রের যুক্তি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*